ভরা মৌসুমেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধানের মোকামে বেচাকেনা কম
ভরা মৌসুমেও ধানের বেচাকেনা কমেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধানের মোকামে। বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হচ্ছে- যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ শতাংশেরও বেশি কম। মূলত মোকামে ওঠা ধান ভেজা হওয়ায় চালকল মালিকরা তা কিনছেন কম। ফলে মোকামে ধানের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বেপারীরা। যদিও ধান বেচাকেনা কমার পেছনে চালের বেচাকেনা কম হচ্ছে বলে দাবি চালকল মালিকদের।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধান বেচাকেনা হয়। জনশ্রুতি আছে, শতবছর ধরে ধানের হাট বসছে এখানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের অন্তত ৭ জেলার ধান কৃষকদের কাছ থেকে কিনে এনে নদীরপারে হাটে বিক্রি করেন বেপারীরা। ধানের এই হাটকে পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম বলা হয়। প্রতিদিন ভোরে অর্ধশতাধিক ধান বোঝাই নৌকা এসে ভিড়ে ভিওসি ঘাটে। এরপর শুরু হয় বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে দুপুর পর্যন্ত মুখর থাকে মোকাম।
প্রতিদিন আশুগঞ্জ মোকামে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মণ ধানের কেনাবেচা হয়। তবে ধানের মৌসুমে বেচাকেনা আরও বেড়ে যায়। মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আড়াইশরও বেশি চালকলে ধানের যেগান দেয় এই মোকাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় চাল সরবরাহ করা হয়।
মৌসুমের সময় সরবরাহ বাড়ায় ধানের দামও তুলনামূলক কম থাকে। গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মোকামে নতুন আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। মোকামে এখন বিআর-৩৯ ও বিআর-৪৯ জাতের ধান পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব ধানের বেশিরভাগই ভেজা। আর ভেজা ধান থেকে চাল কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন চালকল মালিকরা।
মোকামে বর্তমানে বিআর-৩৯ জাতের শুকনা ধান প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে ১২১০ থেকে ১২২০ টাকা আর ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ১০৬০ থেকে ১০৭০ টাকায়। এছাড়া বিআর-৪৯ জাতের শুকনা ধানের প্রতি মণের বাজারদর ১২৫০ টাকা এবং ভেজা ধান কেনাবেচা হচ্ছে ১১০০ টাকায়। তবে নতুন ধানের এ দরকে স্বাভাবিকের অন্তত ২০০ টাকা বেশি বলছেন চালকল মালিকরা।
কয়েকজন চালকল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোকামে এখন যেসব ধান নিয়ে আসছেন বেপারীরা- তার অধিকাংশই ভেজা। আর নতুন ভেজা ধান থেকে পুরাতন ধানের তুলনায় প্রতি মণে অন্তত ৫ কেজি চাল কম হয়। এর ফলে লোকসান গুনতে হয় চালকল মালিকদের। এছাড়া চালের বাজারও এখন স্থবির হয়ে আছে। চালের বেচাকেনা কম হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছে পর্যাপ্ত চাল আছে।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের ধান বেপারী আবুল কাশেম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে তিনি কয়েকশ মণ আমন ধান কিনেছেন। কিন্তু মোকামে এনে সব ধান বিক্রি করতে পারছেন না। নতুন ধানে চাল কম হয়- এ কারণ দেখিয়ে চালকল মালিকরা ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বেপারীদের কাছে পর্যাপ্ত ধান থাকা সত্ত্বেও মোকামে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
আশুগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী হাসান ইমরান জানান, চালের বাজার থমকে আছে। বেচাকেনা একেবারেই কম। এজন্য নতুন করে ধান কিনে চাল তৈরি করছেন না তারা। এছাড়া বাজারে ধানের এখন যে দর, তা চালের বাজারের সাথে মিল নেই। ফলে ধান কিনে লোকসান গুনতে হয়। তবে চালের বাজারদর যদি বাড়ে এবং বেচাকেনা স্বাভাবিক হয়- তাহলে আবারও মোকামে ধানের কেনাবেচা বাড়বে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভেজা ধান শুকিয়ে ভাঙানোর পর প্রতি মণ ধানে চাল হয় ১৮-১৯ কেজি, যা পুরাতন ধানের তুলনায় ৪-৫ কেজি কম। এর ফলে চাল তৈরিতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু চালের দাম সেভাবে বাড়ছে না। ধান এবং চালের বাজার চাঙ্গা হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে'।