বাণিজ্য বিকাশে ২০২৪ সালে চালু হবে নতুন দুই কনটেইনার ডিপো
চট্টগ্রামে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চালু হতে যাচ্ছে নতুন দুটি বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি)। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে দক্ষিণ কাট্টলি এলাকায় অ্যানকোরেজ কনটেইনার ডিপো ও ৩৫ কিলোমিটার দুরে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় বে লিংক কনটেইনারস নামে দুটো ডিপো নির্মিত হচ্ছে।
২০২৪ সালে ডিপো দুটি পুরোদমে চালু হবে। চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য আফসারুল আমিন অ্যানকোরেজ কনটেইনার ডিপোতে এবং ঢাকার এজিসি গ্রুপ বে লিংক কনটেইনারসে বিনিয়োগ করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদন নিয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে খালি কনটেইনার সংরক্ষণ শুরু করেছে ডিপো দুটি। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হলে এনবিআরের অনুমোদন নিয়ে আমদানি রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম শুরু করবে ডিপোগুলো।
প্রতি ২০ একর জায়গায় নির্মাণ হতে যাওয়া ডিপোগুলো ২০২৪ সালে পুরোদমে চালু হলে প্রায় ১২ হাজার টিইইউ কনটেইনার রাখা যাবে। বছরে হ্যান্ডলিং হবে প্রায় ৬ লাখেরও বেশি কনটেইনার।
ডিপো দুটি অপারেশনে গেলে আইসিডির সংখ্যার দাঁড়াবে ২১টি। বর্তমানে ১৯টি আইসিডির কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৭৬ হাজার টিইইউ। দুটি আইসিডি বাড়লে এই ধারণক্ষমতা হবে ৮৮ হাজার টিইইউ।
বাংলাদেশে অফ ডক নামে পরিচিত অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোগুলো প্রায় ৯৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের চালান এবং ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের ব্যবস্থাপনা করে থাকে যার মধ্যে চাল, গম, সরিষা, ছোলা এবং ডাল রয়েছে।
আইসিডিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এবং বন্দর এলাকার বাইরে আনলোড বা ডেলিভারির মাধ্যমে দ্রুত কনটেইনার খালি করতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মতে, বর্তমানে আইসিডিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং প্রায় ৩৫ হাজার লোক এই আইসিডিগুলোতে কাজ করে। বর্তমানে একটি নতুন আইসিডি তৈরি করতে ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
অ্যাংকোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়সাল আমিন টিবিএসকে বলেন, আমাদের আইসিডির কনটেইনার স্টোরেজ সক্ষমতা চার থেকে সাড়ে চার হাজার টিইইউ। ২০২৪ সালে আইসিডির কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
বে লিংক কন্টেইনারসের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ২০ একর জায়গায় বে লিংক কনটেইনারস নির্মাণ কাজ শুরু হয় কোভিডের সময় ২০২০ সালে। জুলাই থেকে আমরা খালি কনটেইনার সংরক্ষণ শুরু করেছি। প্রতিমাসে প্রায় ১০০ খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ডিপোর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে এক সাথে আট থেকে দশ হাজার কনটেইনার রাখা যাবে। বছরে প্রায় চার লাখ কনটেইনারের ব্যবস্থাপনা করা হবে। শেড নির্মাণ হলেই আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আমদানি রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করব। ২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ডিপোর কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির বর্তমান প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নিতে আইসিডিগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ঈদের সময় বিভিন্ন কারখানা থেকে ডিপোতে পণ্য পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যবাহী সড়কে কাভার্ড ভ্যানের লাইন দীর্ঘ হয়ে যায়। একটি ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের ১০ দিনের বেশি অপেক্ষা করতে হয়।
বিজিএমইএ বলছে, এমন পরিস্থিতিতে আইসিডি খাতে নতুন বিনিয়োগ দেশের রপ্তানি খাতের জন্য খুবই ইতিবাচক। কাস্টমস এবং বন্দরের অনুমোদন নিয়ে যত দ্রুত আইসিডিগুলো অপারেশনে নিয়ে আসা যায় ততই মঙ্গল।
বিজিএমইএ'র ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ব্যবসায়ীরা সব সময় বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দুটি নতুন আইসিডি নির্মাণ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বলে আমরা মনে করি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসার গতি কমে হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। তখন নতুন ডিপো ভালো ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি'।
বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান টিবিএসকে বলেন, 'নতুন দুটি আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যদিও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বর্তমানে বৈশ্বিক মন্দা চলছে, তবে তা অচিরেই কেটে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সামাল দিতে নতুন ডিপো দুটি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে অ্যাংকোরেজ ডিপোকে বিকডার সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'আগামী ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার মুল্যের তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সামাল দিতে আরও নতুন আইসিডি নির্মাণ জরুরি। তাই এই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই'।