টাকায় লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির প্রস্তাব যাচাই করে দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে সভায় টাকাতে লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট করা নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, "আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। টাকায় লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সেটেলমেন্ট করতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সার্কুলারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় কিনা তা আমাদের দেখতে হবে।"
"এছাড়া ট্যাক্স, ইনসেনটিভসহ এ বিষয়ের আইনি বিশ্লেষণও প্রয়োজন। সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবার বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে এ সভায় বিকেএমইএ ও বিটিএমএ নেতারা অংশ নেন।
সভায় দুই সংগঠনই টাকায় লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সেটেলমেন্ট নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন।
সভা শেষে বিকেএমইএ এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, "বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট চলছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ সংকট না কাটা পর্যন্ত লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি টাকায় খোলা ও সেটেলমেন্টের অনুরোধ জানিয়েছি।"
"টেক্সটাইল মিলারদের সুতা আমদানিতে ডলারের প্রয়োজন হয়। তবে আমরা ডলারে তাদের পেমেন্ট করতে গেলে তুলার কেনা দামের চাইতে কয়েকগুণ বেশি ডলার পেমেন্ট করতে হয়। আমরা চাই, এই পেমেন্টটা টাকায় করতে,"
তিনি আরো বলেন, "অন্তত ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে যেন টাকায় পেমেন্ট করা যায়, এমন সিদ্ধান্ত হলেও আমাদের সুবিধা হয়। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের ক্রাইসিস কিছুটা হলেও কমে আসবে।"
বিটিএমএ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লোকাল এলসির মাধ্যমে যে সুতা বিক্রি করা হয়, তার জন্য তুলা বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। ফলে টাকায় লোকাল এলসি খোলা হলে তুলা আমদানির জন্য তাদের আলাদা করে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার খুঁজতে হবে।
এছাড়া রপ্তানিকারকদের রিজার্ভ থেকে দেওয়া ইডিএফ লোনের কিস্তিও ডলারে পরিশোধ করতে হয়। টাকায় এলসি খোলা বা সেটেলমেন্ট হলে তাদের ডলার সংকটের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া তাদের অনেক টাকা ক্ষতিও হবে ইমপোর্ট সেটেলমেন্টে ডলার কিনতে গিয়ে।
সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের নেতৃত্বে নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ জাকির হাসান, ফরেইন এক্সচেঞ্জ পলিসি বিভাগের পরিচালক মো. সরওয়ার হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টাকায় এলসি না খুলতে যুক্তি দেখিয়ে পাল্টা চিঠি দিলো বিটিএমএ
স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা ও সেটেলমেন্টে ডলারের পরিবর্তে টাকা ব্যবহারের বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাল্টা চিঠি দিয়েছে বিটিএমএ।
এর আগে, গত ৬ নভেম্বর ডলারের বদলে টাকায় এলসি খোলা ও সেটেলমেন্টের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় বিকেএমইএ। মূলত এ চিঠির প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নিতে রপ্তানিকারকদের সংগঠনগুলোকে ডেকেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিটিএমএ এর চিঠিতে বলা হয়, তুলা, রং-রাসানিক উপাদানসহ অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়, যেগুলোর মূল্য ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ইডিএফ থেকে লোন নেওয়া হয়, যার কিস্তি পরিশোধে ডলার প্রয়োজন। সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি করে। এসব আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার প্রয়োজন।
এছাড়া দেশের বাইরে থেকে সুতা আমদানি করতে হলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কে ডলার পরিশোধ করতে হয়। একই সুতা দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে।
এসব কারণ দেখিয়ে লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট টাকায় সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।