৪ বছরে প্রথমবারের মতো কমলো গ্রামীণ অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং আমানত
মুদ্রাস্ফীতির চাপে গত ৪ বছরে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং এর আমানত কমেছে। গত নভেম্বরে এক হাজার কোটি টাকা কমেছে সংশ্লিষ্ট খাতের আমানত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে গ্রামীণ অঞ্চলে আমানত আগের মাসের ২৪,৭২০ কোটি টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৩,৭৪৮ কোটি টাকা।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করা হয়, তার সিংহভাগই আসে গ্রামীণ অঞ্চল থেকে। তাই নভেম্বরে শহরাঞ্চলে আমানত কিছুটা বাড়লেও গ্রামীণ অঞ্চলে কমার কারণে সর্বোপরি আমানত কমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গতবছরের নভেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং এ ডিপোজিট এসে দাঁড়িয়েছে ২৯,৬৫৯ কোটি টাকায়। অক্টোবর শেষে এই ডিপোজিটের পরিমাণ ছিল ৩০,৬২৭ কোটি টাকা। এর আগে সর্বশেষ গতবছরের জানুয়ারিতে এজেন্ট ব্যাংকিং এর ডিপোজিটে নেগেটিভ গ্রোথ দেখা গিয়েছিল।
ব্যাংক খাতে ডিপোজিট কমে আসার প্রবণতাই প্রভাব ফেলেছে এজেন্ট ব্যাংকিংকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত নভেম্বরে ব্যাংক খাতে ডিপোজিট আগের মাসের তুলনায় ৩১৫৫ কোটি টাকা বা ০.২১% কমে গেছে। নভেম্বর শেষে ব্যাংকে ডিপোজিট আছে ১৪,৮৬,৮৮৮ কোটি টাকা। অক্টোবর শেষে এই পরিমাণ ছিল ১৪,৯০,০৪৩ কোটি টাকা। মূলত, গ্রাহকেরা টাইম ডিপোজিট ভাঙানোর কারণে এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ব্যাংক খাতে, বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী টিবিএসকে বলেন, "প্রথমত, মুদ্রাস্ফীতি এজেন্ট ব্যাংকিং এর ডিপোজিটকে কমিয়ে দিয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব দেশের গ্রামাঞ্চলেও পড়েছে। ফলে লোকজন এখন আগের মতো সেভিংস করতে পারছে না।"
"দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হওয়ার কারণে ব্যাংকখাতে উপর মানুষের আস্থার কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের লোকজন বিভিন্ন রিউমার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এ কারণে তারা ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে হাতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতাও বেড়েছে। মূলত এই দুই কারণেই এজেন্ট ব্যাংকিং এ ডিপোজিট কমেছে।"
ডিপোজিট এখন কমলেও এই প্রবণতা খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না উল্লেখ করে অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার বলেন, "আমার ধারণা ব্যাংকখাত দ্রুতই চলমান আস্থার ঘাটতি কাটিয়ে উঠবে।"
তবে ডিপোজিট কমলেও গত নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় ট্রানজ্যাকশন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৬৫,০৬২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে নভেম্বরে লোন ডিসবার্সমেন্ট বেড়ে ৭৮৭ কোটি টাকা ও ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স বেড়ে ২৮২৩ কোটি টাকা হয়েছে। একইসঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং এর গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে ১.৭৩ কোটিতে পৌঁছেছে।
গ্রামীণ বাংলাদেশে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে বেড়ে ১০.৩১% হয়েছে যা আগের মাসে ৯.৯৮% ছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির প্রভাবে গ্রামীণ অঞ্চলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে। অক্টোবরে যা ছিল ৮.৯২,%, নভেম্বরে তা হয়েছে ৮.৯৪%।
নভেম্বরে, গ্রামীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি অবশ্য আগের মাসে ৮.৩৮% থেকে কমে ৮.২৩% হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে। যার লক্ষ্য ছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারীদেরকে ব্যাংকিং পরিষেবা দান করা।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর আগে শহরাঞ্চলে আমানত বাড়া-কমার মধ্যে থাকলেও গ্রামীণ অঞ্চলে আমানত কখনো কমেনি।