জানুয়ারিতে পর্যাপ্ত এলসি, রমজানের পণ্য নিয়েও চিন্তা নেই: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে, যার পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় অনেক বেশি। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যমে এলসি খোলার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। এসব অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে এলসি খোলার তথ্য প্রকাশ করে মুখপাত্র জানান, রমজান মাসে ৫টি পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর বাজার স্বাভাবিক রাখতে এসব পণ্য আমদানিতে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তথ্য মতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৫.৬৬ লাখ মেট্রিক টন চিনির এলসি খোলা হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫.১১ লাখ মেট্রিক টন। সুতরাং এ বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি চিনির এলসি খোলা হয়েছে।
মেজবাউল হক জানান, আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় গত মাসে ছোলা বাদে বাকি পণ্যগুলোর জন্য এলসি খোলা বেড়েছে। এর মধ্যে ভোজ্য তেল ৩৯ হাজার টন, পেয়াজ ৬.৩৩ হাজার টন ও খেজুরের এলসি খোলা বেড়েছে ১৩ হাজার টন। গতবছরের জানুয়ারির তুলনায় ছোলার এলসি কম খোলা হয়েছে ৪১ হাজার টন।
তবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের এই তিন মাসে ভোজ্য তেল আমদানির জন্য ৪.৯২ লাখ মেট্রিক টনের এলসি খোলা হয়েছিল। ২০২২ সালের একই সময়ে ৩.৫১ টনের এলসি খোলা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় দেড় লাখ টনের এলসি খোলা কমেছে। ভোজ্য তেলের চাহিদার একটা অংশ মেটানো হয় আমদানি করা বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে। ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে মাত্র ৭৮ হাজার টন সয়াবিন বীজের এলসি খোলা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৫ গুণ এলসি খোলা হয়েছিল।
একইভাবে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের তুলনায় গতবছরের একই সময়ে, চিনির এলসি খোলা কমেছে ১.৪৮ লাখ টন, ছোলার কমেছে ৬৮ হাজার টন এবং খেজুরের কমেছে ১০ হাজার টন। অবশ্য এই সময়ে পেঁয়াজের এলসি খোলা ৫ হাজার টন বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, "পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে রমজানে কোন পণ্যের ঘাটতি হবে না। এছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধিতেও আমরা বিশেষ নজর রেখেছি। গত নভেম্বর মাস থেকে প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের একই সময় ছিল ২৯ বিলিয়ন ডলার।"
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি মিলিয়ে গত সাত মাসে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজবাউল হক। কিন্তু এই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটা হাতে এসে পৌঁছায়নি। কারণ অন্য রপ্তানি করার পর টাকা পরিশোধের জন্য ১২০ দিন সময় পেয়ে থাকেন বিদেশি আমদানিকারকরা। তবে এর বিপরীতে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তন বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই হঠাৎ কোন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা যায় না। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, কোভিড ও বৈশ্বিক ঋণের সুদ হারের ঊর্ধ্বগতি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমরা আস্তে আস্তে সংস্কারের দিকে হাঁটছি।"
সংস্কারের অংশ হিসেবে ভোক্তাঋণের সুদ হার ৯% থেকে ১২% এ উন্নীত করার উদাহরণ দেন তিনি।
সার্বিকভাবে পণ্য আমদানিতে স্বস্তির বার্তা দিতেই গতকালের সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয় বলে মন্তব্য করেন মেজবাহুল হক।