ইভ্যালির ১৪ গ্রাহক ফেরত পেলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা
বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির মোট ১৪ জন গ্রাহক অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে, এসএসএল কমার্সের কাছে আটকে থাকা ১ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি টাকা ফেরত পেয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইভ্যালি টাকা ফেরত দিয়েছে।
এছাড়াও ধাপে ধাপে বিকাশ, নগদ ও এসএসএলে আটকে থাকা টাকাগুলো গ্রাহকদের রিফান্ড করা হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ইভ্যালি গ্রাহকদের নগদে প্রায় ১৭.৬৯ কোটি টাকা, বিকাশে ৪.৯১ কোটি টাকা এবং এসএসএল কমার্সে ৩.৪০ কোটি টাকা আটকে আছে।
এছাড়াও, অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েতে স্বল্প অ্যামাউন্টের কিছু টাকা আটকা। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নগদে আটকে থাকা দেড় কোটি টাকা রিফান্ডের সম্ভাবনা রয়েছে।
গত মাসের শুরুর দিকে সরকার স্থানীয় পেমেন্ট গেটওয়েগুলোকে ইভ্যালি গ্রাহকদের আটকে থাকা ফান্ড সম্পর্কে তথ্য দিতে বলে।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেল ইভ্যালিকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তার গ্রাহকদের সংখ্যা এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে ডেটা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সে নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হয়। মন্ত্রণালয়কে ইভ্যালি জানায়, তাদের গ্রাহকসংখ্যা দুই লাখের বেশি।
এক ডকুমেন্টে ইভ্যালি দাবি করে, ক্রয়াদেশের বিপরীতে এ পর্যন্ত সাত মিলিয়নেরও বেশি পণ্য সফলভাবে বিতরণ করেছে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৭টি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকদের আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫২৫ কোটি টাকার মতো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩টি কোম্পানি ৩৭,৩৩৩ গ্রাহককে আটকে থাকা টাকার প্রায় ৩২৫ কোটি ফেরত দিয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ইভ্যালি তার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে। এটি পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের নতুন একটি পরিচালনা পর্ষদও গঠন করা হয়।
নতুন বোর্ডে ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, শামীমার মা ফরিদা তালুকদার লিলি এবং তার বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ রয়েছেন।
বাংলাদেশে আমাজন ও আলিবাবার মতো প্লাটফর্ম তৈরির স্বপ্নের কথা বলে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। অধিক গ্রাহক আকর্ষণ করতে অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট দিয়ে অগ্রিম অর্থ নিয়ে পণ্য সরবরাহ করতো ইভ্যালি।
শুরুতেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল চালু করেন ক্যাশব্যাক অফার। এ অফারের আওতায় পণ্যভেদে ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতেন গ্রাহকরা।
টাকা ক্যাশব্যাকের এমন আকর্ষণীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে প্রচুর পরিমাণে গ্রাহক ইভ্যালি থেকে কেনাকাটা শুরু করেন। এরপর 'সাইক্লোন' নামে একটি অফারের মাধ্যমে বিশাল ছাড়ের ঘোষণা দেন রাসেল। সেখানেও পণ্যভেদে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হতো।
এরমধ্যে ইভ্যালিকে জনপ্রিয় করতে রাসেল প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পন্সর, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে স্পন্সর করা এবং তারকা ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রতিষ্ঠানটির পণ্যদূত বানানো শুরু করে।
কোম্পানি ব্র্যান্ডিংয়ের এই ডামাডোলের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারি নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। ৪৫ দিনের মধ্যে এসব পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও, তা কখনো কখনো তিন মাস এমনকি ছয় মাসও ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। অর্থনীতির শাস্ত্রে 'পঞ্জি স্কিম' নামে যে প্রতারণার ফাঁদের কথা বলা হয়, সেটিই অনুসরণ শুরু করেন রাসেল। নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে পুরনো গ্রাহক ও মার্চেন্টদের টাকা পরিশোধ শুরু করে ই-কমার্স কোম্পানিটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার কারণে এক সময় ইভ্যালির কেলেঙ্কারি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন নতুন করে 'ছলচাতুরির' আশ্রয় নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ রাসেল জানান, বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে।
তবে পরবর্তীতে যমুনা সরাসরি জানিয়ে দেয়, তারা ইভ্যালিতে কোনো বিনিয়োগ করছে না।
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির এক গ্রাহক জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির তৎকালীন চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।
মামলা দায়েরের পরদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসা থেকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।
রাসেল এখনো কারাগারে থাকলেও, শামীমা জামিনে বের হয়ে পুনরায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান হয়েছেন।