ডলার বিক্রির রেট বাড়িয়ে ১০২ টাকা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ না করতে পারলেও, ডলার বিক্রির রেট ১০১ থেকে বাড়িয়ে ১০২ টাকায় উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত হারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য এই হার বাড়ানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "আমরা চাইছি, ডলার বিক্রির রেটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গ্যাপ কমিয়ে নিয়ে আসতে। এর অংশ হিসেবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেট বাড়িয়েছে।"
"আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশের রিজার্ভকে যেন একটি স্ট্যাবল অবস্থানে রাখা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভের উপর চাপ পড়ছে কথা সত্য। তবে, বিপদের দিনে যদি ব্যবহার না করা যায় তাহলে এতো রিজার্ভ রেখে কী হবে," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "আমরা রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করছি, সেগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সরকারি বিভিন্ন আমদানির পেমেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের ডিমান্ড কম থাকছে ও আমদানির অন্য পেমেন্ট করতে চাপ কম পড়ছে।"
সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি ডলারের রেট ১ টাকা বাড়িয়ে ১০১ টাকা করা হয়। এর আগে ৩ জানুয়ারি ডলারের রেট ৯৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছিল।
এছাড়া গত ৫ ডিসেম্বর ডলারের রেট ৯৮ থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা এবং নভেম্বরে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা করা হয়েছিল। এ নিয়ে সর্বশেষ সাতবারই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ১ টাকা করে বাড়ানো হলো।
রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, "আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ডলার চাইছি, তারা আমাদের সে পরিমাণ ডলার দিচ্ছে না। আজ (বুধবার) আমরা যে পরিমাণ ডলার চেয়েছিলাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদার পুরো ডলার দেয়নি।"
এলসি পেমেন্টে ডলারের চাহিদা আছে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরে সরকারি এলসির পেমেন্টে ডলারের কম রেট ধরে, ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর লস হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও যেন লস না হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলো সতর্ক আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির এই রেটটিকে বলছে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট'। যে ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে সেটিকে বলা হচ্ছে বাজারের সঙ্গে 'এডজাস্টমেন্ট'।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেলিং রেট বাড়লে সেটিকে 'টাকার অবমূল্যায়ন' বলে ধরা হতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিজেদের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা রেটে ডলার কেনাবেচা করেছে।
চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের ডলার বিক্রি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯.৯৫ বিলিয়ন ডলার। বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর কাছে নতুন রেটে ৫৬ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি দাঁড়ায় ১০.০০৪ বিলিয়ন ডলারে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। অবশ্য মহামারির মধ্যে কম আমদানি এবং উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ২০২১ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার দিনশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৩২.৩৩ বিলিয়ন ডলার। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) কে প্রায় ১.১ বিলিয়ন পরিশোধ করতে হবে বিধায় তখন দেশের রিজার্ভ নেমে আসবে ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা এই নয়টি দেশ আকু'র সদস্য।
এক্সপোর্ট প্রসিডে ডলারের রেট বেড়ে ১০৪ টাকা
এক্সপোর্টাররা এখন থেকে এক্সপোর্ট প্রসিডের ডলারের রেট পাচ্ছেন ১০৪ টাকা করে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এর এক অনলাইন সভায় এক্সপোর্টারদের ডলারের রেট ১ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।