৬২ হাজার খামার বন্ধ হওয়ায় সরবরাহ সংকট, ডিম-মুরগির ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণের দাবি খামারিদের
দেশে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারকে 'যৌক্তিক দাম' নির্ধারণের জন্য আহবান জানিয়েছেন খামারিরা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) মতে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে মহামারি আঘাত হানার সময় দেশের ৬২,৬৫৬টিরও বেশি পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে; যা মুরগি এবং ডিমের সরবরাহে ঘাটতি তৈরী করেছে।
রোববার (৫ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন।
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ডিম ও মুরগির মাংসের খুচরা দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন খামারিরা ভালো দাম না পাওয়ার কারণে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ১৫৮,১৭৯টি খামারের মধ্যে ৯৫,৫২৩টি খামার উৎপাদনে রয়েছে। বাকি ৬২,৬৫৬টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
এর প্রভাবে, প্রতিদিনের মুরগির উৎপাদন সক্ষমতা ৫,২৭৩ মে. টন থেকে কমে ৪২১৯ মে. টনে নেমেছে। অর্থাৎ মাংসের উৎপাদন কমেছে ২৫.৭১ শতাংশ। একইভাবে ডিমের উৎপাদন প্রতিদিন ৬.৬৪ কোটি পিস থেকে কমে ৪.৩২ পিসে নেমেছে। যেখানে উৎপাদন কমেছে ২৫ ভাগ। অথচ বিয়েশাদি, পিকনিক সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে মুরগি ও ডিমের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এই সরবরাহ না থাকার কারণেই বাজারে ডিম ও মুরগির দাম বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৭ টাকা, যেখানে খামারি বিক্রি করছে ১৯০-২০০ টাকায়। ঢাকার বাজারে এই মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা পর্যন্ত দামে। বাড়তি দামের কারণে খামারিরা দীর্ঘদিন পরে লাভের মুখ দেখলেও এই দামটা স্বাভাবিক না বলে দাবি করা হয়।
অন্যদিকে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১১.৭১ টাকা, যেখানে খামারি লোকসান দিয়ে বিক্রি করছে ৯.৪৫ টাকায়। ডিমে খামারিরা লোকসান গুনছেন এবং এটাও স্বাভাবিক দাম না। এই অবস্থার অবসানের জন্য খামারিরা সরকারের হস্তক্ষেপে ডিম ও মুরগির 'যৌক্তিক দাম' নির্ধারণের দাবি করেন।
অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, "খামারিদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে ১০-১৫ টাকা এবং প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচের সঙ্গে ২৫-৫০ পয়সা পর্যন্ত লাভ রেখে বিক্রির অবস্থা তৈরি করতে পারলে খামারিরা লাভে থাকবে এবং বাজারেও যৌক্তিক দামে মুরগির মাংস ও ডিম বিক্রির পরিবেশ ফিরে আসবে।"
তিনি বলেন, "করোনা পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মুরগির বাচ্চা, ফিডের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। জাহাজ ভাড়া, ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহন সহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এখন হয়তো নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের চাপে সরবরাহ সংকট, কিন্তু ক'দিন পরেই আবার এই দাম পড়ে যাবে। তখন খামারিরা আবারও লোকসানে পড়বে।"
খন্দকার মো. মহসিন বলেন, দীর্ঘদিন লোকসানের কারণেই অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন যারা আছে তারা কিছুটা লাভ পাচ্ছে। বাজারে যে দাম সেটাও যৌক্তিক না, আমরা চাই এই অস্থিরতা না থাকুক। দামটা নির্ধারণ করে দিতে পারলে ভবিষ্যতেও খামারিরা সংকটে পড়বে না।
২০১০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটা মূল্য নির্ধারণ কমিটি করা হয়েছে। খামারিরা দাবি করেন, এই কমিটি এখন পর্যন্ত কোন ধরনের কাজই করেনি, অকার্যকর একটা কমিটি। এই কমিটির উচিত উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে মাসে অন্তত দু'বার যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়া।
এ সময় অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার মনির আহম্মেদ বলেন, "এখন মুরগির যে উৎপাদন খরচ সেটা সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে নির্ধারণ করতে পারে। সেখান থেকে যৌক্তিক লাভের হিসেব করে একটা দাম নির্ধারণ করে দিক। তা না হলে বাকি খামারিরাও আস্তে আস্তে ঝরে পড়বে।"
বাজারে কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন জানান, ৮৪ শতাংশ উৎপাদন ক্ষুদ্র খামারিদের নিয়ন্ত্রণে। মাত্র ১৬ ভাগ উৎপাদন রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল খামারিদের কাছে। ক্ষুদ্র খামারিদের পক্ষে সারাদেশে এক হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই।