বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৩%, অর্থছাড় ১৭%
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় কমেছে। এর ফলে চাপে পড়তে পারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ৬৩.১৯% কমে ১.৭৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৪.৮৪ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, ২০২৩ অর্থবছরের আট মাসে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় কমেছে ৪.৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫.৮৯ বিলিয়ন ডলার। গতবারের তুলনায় এবার অর্থছাড় কমেছে ১৭%।
ইআরডি কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ফ্লোটিং রেটে ঋণের সুদের হার বেশি। বর্তমানে, ছয় মাসের সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) প্রায় ৪%, এ কারণে সরকার ফ্লোটিং রেটে ঋণ নিচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড পাঁচটি প্রকল্পের জন্য ২ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে। এরমধ্যে একটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলো এখনও বাকি চারটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সামনে উপস্থাপন করতে না পারায় এগুলোর ঋণচুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব হচ্ছে।
এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনও শেষ না হওয়ায় সরকার একটি নির্দিষ্ট হারে ফ্লেক্সিবল ঋণ নিতে পারছে না। এটি উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতিকে প্রভাবিত করছে বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইআরডি কর্মকর্তারা আরও জানান, গত বছরের মতো এবার চাহিদা অনুযায়ী বাজেট সহায়তা পাবে না বাংলাদেশ। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া গেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাইকার কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অঙ্গীকার পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা (টিকা কেনার টাকাসহ) পেয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ফেব্রুয়ারিতে ৪৭৬.২৭ মিলিয়ন ডলারের প্রথম কিস্তি ছাড় করেছে তারা। কিন্তু এই পরিমাণ ইআরডির গণনায় হিসাব করা হয়নি।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফ এর ঋণ নিয়মিত সহায়তা নয়, তাই আপাতত বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি হিসেবে এটি গণ্য হবে না। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শেষে 'বহিরাগত সম্পদের প্রবাহ ২০২২-২৩'-এ এই ঋণের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর প্রাক্তন মহাপরিচালক ডক্টর মোস্তফা কে মুজেরি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা এখন বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে বেশি সহায়তা দিচ্ছে বিধায় বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে।
"এছাড়া, প্রতিশ্রুতি হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ (প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার) পাইপলাইনে থাকলেও আমরা সেটি দ্রুত পাচ্ছি না। উন্নয়ন সহযোগীরা যে নতুন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে তার পেছনে একটি কারণ হতে পারে এটি।"
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সবচেয়ে বেশি (৮৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি) ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৩০০ মিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা না থাকায় আশানুরূপ পরিমাণে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) সরকারি তহবিল থেকে কোনো অর্থ বাদ দেওয়া হয়নি, কিন্তু বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে ১৮,৫০০ কোটি টাকা ছাঁটাই করা হয়েছে।
ইআরডির তথ্যে আরো জানা যায়, সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ১.৪ বিলিয়ন ডলার শোধ করেছে। ২০২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১.৩ বিলিয়ন ডলার।