অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ৩ নীতি সংস্কারে জোর বিশ্বব্যাংকের, জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.২%
বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান ধারা বজায় রাখতে তিন নীতি সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি)। তারা বলছে, অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান রাখতে ব্যাংক বোর্ডে আইন প্রণয়ন, ঋণের সুদহারের সীমা উঠিয়ে দেওয়া এবং একক বাজার নির্ধারিত বিনিময় হার নিয়ে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে 'ট্রেড রিফর্ম: অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা'- শীর্ষক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট এপ্রিল-২০২৩ প্রতিবেদন প্রকাশকালে এই তিন নীতি সংস্কারের সুপারিশ করেন।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
"বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে। আমরা সেটি দেখতে চাই, যেন প্রয়োজন সাপেক্ষে সেখানে পরামর্শ দিতে পারি," বলেন তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বাজারের মাধ্যমে বিনিময় হার নির্ধারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাজারকে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করতে দেয়, তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে এবং তাতে রপ্তানিকারকরাও উৎসাহিত হবেন।"
আবদৌলায়ে সেক তার পর্যবেক্ষণে আরও জানান, কম আমদানিতে দেশের বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি, উভয়ই আরও মন্থর হয়েছে।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও এর কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়া, খরচ বেড়ে যাওয়া, সেইসঙ্গে জ্বালানি ঘাটতি, আমদানি বিধিনিষেধাজ্ঞা এবং মুদ্রানীতি কঠোর হওয়ায় চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.২ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে বিশ্বব্যাংক।
এর আগের বছরে অনুমিত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.২ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তবে, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক দাতাসংস্থাটি জানুয়ারিতে বলেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আবারও তার সম্ভাব্য গতিতে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচিক প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং এর ফলে বাসাবাড়িসহ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।
বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস পেতে থাকলে সামনে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যদি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা না থাকতো, তাহলে এই সংকট আরও জোরালো হতো।
জ্বালানি খরচ কমাতে সরকার লোডশেডিং, কারখানা বন্ধ, যানবাহন ক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।