বিনিময় হার কম থাকায় এপ্রিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৬.২৮%
ডলারের দাম কম দেওয়ার কারণে চলতি এপ্রিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৬.২৮ শতাংশ।
ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলারে বিনিময় হার মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে কম থাকায় রেমিট্যান্স প্রবাহও কম ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের এপ্রিলে ২.০১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এমনকি চলতি বছরের মার্চে ডলারের রেট বেশি দেওয়ার কারণে ২ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ, আগের মাসের তুলনায় এপ্রিলে রেমিট্যান্স কম এসেছে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার।
কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানিয়েছেন, অন্য সাধারণ মাসের তুলনায় ঈদের মাসে রেমিট্যান্স কয়েকশ মিলিয়ন বেশি আসে। এবারও তেমন হবে বলে আশা করা হয়েছিল।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৬০টির মতো ব্যাংকের মধ্যে ২৮টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স আয় মার্চের তুলনায় বেড়েছে। অন্যদিকে ২২টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স আয় কমে গেছে। বাকি ১০ ব্যাংকের রেমিট্যান্স আয় স্থির আছে।
রেমিট্যান্স কমার মূল ধাক্কাটা গেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উপর দিয়ে। মার্চে যেখানে ব্যাংকগুলো ১.৭৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পেয়েছিল, সেখানে এপ্রিলে পেয়েছে মাত্র ১.৩৮ বিলিয়ন ডলার। এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আয় কমেছে ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আয় মার্চের তুলনায় কমে আসলেও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে।
মার্চে সোনালী, অগ্রণী, জনতাসহ রাষ্ট্রায়ত্ব ৬ ব্যাংক মিলে রেমিট্যান্স পেয়েছিল ২৩৫ মিলিয়ন ডলার। এপ্রিলে এই ব্যাংকগুলো পেয়েছে ২৪৫ মিলিয়ন ডলার।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, সামনের দুই-তিন মাস ইমপোর্ট পেমেন্টের বেশ ভালো একটা চাপ থাকবে। ফলে, রেমিট্যান্স বেশি আসাটা ব্যাংকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত এপ্রিলের শুরুতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডিদের অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্ধারিত রেটের চাইতে বেশি রেট দিয়ে রেমিট্যান্স আনার বিষয়ে সতর্ক করে। অবশ্য, এর আগে মার্চ মাসে ডলারের রেট বেশি দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জেনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, তাই রেমিট্যান্সও বেড়েছিল।
ছয়মাস পর গত রোববার রেমিট্যান্সের ডলারের রেট ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করেছে এবিবি ও বাফেদা। এখন থেকে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে ডলারপ্রতি ২.৫% প্রণোদনাসহ ১১০ টাকা ৭০ পয়সা করে রেট পাবেন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "গত কয়েকবছরে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর প্রবাসী শ্রমিক বাইরে গেছে। সে হিসাবে আমাদের রেমিট্যান্স আরো বাড়ার কথা ছিল। এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ হলো, অধিকাংশ ব্যাংকই রেমিট্যান্সের ডলারের ক্ষেত্রে বাফেদা নির্ধারিত রেট থেকে বেশি দেয়নি।"
"এছাড়া, আমাদের হুন্ডির চাহিদা কমাতে হবে। এটি না কমালে যতো উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, রেমিট্যান্স খুব বেশি বাড়বে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্স বেশি আসাটা আমাদের দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি," বলেন তিনি।