কৃষি খাতে ৩৫,৩৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে এ বাজেট উত্থাপন করেন তিনি।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।
বাজেট পেশ করার সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, "কৃষি আমাদের অগ্রাধিকার খাত। কৃষি খাতের প্রধান উপকরণ, বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে এবং প্রধান খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক হার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।"
২০২৪ অর্থবছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে ২৫,১২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে সরকার; বিগত ২০২৩ অর্থবছরে যা ছিল ২৪,২২৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, "অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয় ও সম্প্রসারিত সামুদ্রিক জলাশয়ের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে আছে। পাশাপাশি, বিশেষ সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিস উৎপাদনে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৮ম ও ১১তম স্থান অধিকার করেছে। এছাড়া বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১ম; তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ার মধ্যে ৩য় স্থানে আছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে সার কিনতে সরকারকে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়েছে। সে কারণে সংশোধিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এবছরের শুরুতে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল ৯৫০০ কোটি টাকা।"
তবে কৃষি প্রক্রিয়াকরণকে একটি শিল্প হিসেবে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের জন্য খোসা ছাড়ানো কাজু বাদাম এর আমদানিতে সর্বমোট করভার ১৫.২৫% হতে বৃদ্ধি করে ৪৩% নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ড্রায়ার, পটেটো প্লান্টার ও প্রেয়ার মেশিন আমদানিতে অগ্রিম কর মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ, কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে মাছের জাত উন্নয়ন, মলিকিউলার বায়োলজি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে হ্যাচারি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, "আমরা গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্মার্ট লাইভস্টক সেক্টর গঠন ও উৎপাদন দ্বিগুণ করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং দুধ উৎপাদনে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং দুধ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন হয়েছে, আর এর জন্য সরকারের নিরলস প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।"
তিনি বলেন, ৬৬টি দেশীয় উৎস থেকে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করায় কোরবানির পশুর বাজারও স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে।
"২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমাদের লক্ষ্য হল- দেশজ উৎপাদিত দুধের দৈনিক মাথাপিছু প্রাপ্যতা ২৩৬ গ্রাম এ উন্নীত করা, গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ৪৬ লক্ষ মাত্রা সিমেন উৎপাদন করে দেশব্যাপী ৪২ লক্ষ গাভী/বকনাকে কৃত্রিম প্রজনন করানো, সরকারি পোলট্রি খামারে ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন ও ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করা", বলেন অর্থমন্ত্রী।
মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এর লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭.৬১ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
নতুন বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হতে চলেছে। সে তুলনায়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন তাজউদ্দিন আহমদ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড়। এটি দেশের ৫২তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম ও আ হ ম মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট।
'উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে' শীর্ষক বাজেট বক্তব্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে জনগণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে এবারের বাজেট তৈরি করা হয়েছে।