নির্বাচনের বছরের বাজেট? হ্যাঁ ও না
এ বাজেটকে কি নির্বাচনের বছরের বাজেট বলা যায়?
হ্যাঁ — কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে না।
এ বাজেট কি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক খাতের ওপর চাপের দ্বৈত ধাক্কা সামলাতে পারবে?
এর উত্তরও সম্ভবত 'না'।
আর প্রস্তাবিত বাজেট কি শিল্পকে খুশি করবে?
অধিকাংশক্ষেত্রে হ্যাঁ।
কিন্তু কৃষিখাতে কী হবে?
এ খাতে প্রণোদনার ধারা অব্যাহত থাকবে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে আরেকটু সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি?
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নিজের ৫ম বাজেট বক্তৃতায় বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট আইনের সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসার সুবিধার উন্নয়নের বিষয়ে কিছু আশা দেখিয়েছেন।
কিন্তু প্রস্তাবিত স্বল্পমাত্রার অঙ্গীকার ও কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক খাত নিয়ে হতাশাই বেশি প্রকট হয়ে উঠছে।
তাই, আমরা কেন এ বাজেটকে নির্বাচনের বছরের বাজেট এবং তেমনটা নয় — উভয়ই বলতে পারি?
বৈশ্বিক মন্দার প্রবণতা এবং এ বছরের ব্যয় ২.৬ শতাংশ কমে যাওয়ার হিসাবকে মাথায় রেখে সরকার এর ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা ১৫.৩ শতাংশ বাড়িয়েছে।
মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কেবল ০.৭ শতাংশ বেশি এ বছরের সংশোধিত ব্যয়ের বিপরীতে আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রাও ১৪.৭ শতাংশ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বাস্তবতার গুরুত্বের নিরিখে নির্বাচনের বছরের বাজেট এমনটাই হওয়া উচিত (তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করলে এ বৃদ্ধি খুব বেশি নয়, এমন কথাও বলতে পারেন কেউ)।
জনগণের (দলের লোকজনকেও) হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দিতে আপনি ব্যয় বাড়িয়ে দেন। আপনার কাছে টাকা থাকলে মানুষও খুশি হয় (দলীয় লোকজনও আনন্দিত বোধ করেন, কারণ তাদেরও তো নির্বাচনের খরচ আছে)।
কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হলেও টাকার হিসাবনিকাশ সব উলটে যায়।
এত এত খরচের জন্য টাকা কোত্থেকে আসবে? দেশের টালমাটাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য বাজেট সহায়তার বিনিময়ে আইএমএফ যেমনটা চেয়েছে, মনে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীও তা-ই করার চেষ্টায় আছেন — সবদিক থেকে যতটা সম্ভব অর্থ বের করার মরিয়া চেষ্টা। এ অর্থবছরের শূন্য প্রবৃদ্ধির সাপেক্ষে ১৫.৫ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে পুরোদস্তুর ভিন্ন মনে হচ্ছে।
মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষরা যেমন কষ্টের মুখে পড়বেন, তার সঙ্গে ভোক্তার ব্যয়ের ওপরও এটি অনিবার্য প্রভাব ফেলবে। এ কথা মনে রাখা দরকার যে বাংলাদেশের জিডিপি'র বেশিরভাগই (৭৪ শতাংশ) তৈরি হয় ভোগ থেকে। অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধির ওপর সরাসরি আঘাত আসবে।
আরও বেশি কর আহরণের সিদ্ধান্ত কেবল সাধারণ মানুষের জীবনকে কঠিনতর করে তুলবে।
তাই, এ ধরনের কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রত্যাশাই একটা নির্বাচনের বছরের জন্য ভালো কিছু হয় না।
আর কর আহরণ হোঁচট খেলে কী হবে — যেমনটা এ বছর হয়েছে, আগে আরও অনেকবার হয়েছে?
সেটা হলে তবে অর্থের অভাবে ব্যয় কমাতে হবে, টাকাও বেশি মানুষের হাতে পৌঁছাবে না। ফলে তৈরি হবে একটা অখুশি ভোট ব্যাংক — ওরকম ব্যাংক বাস্তবে আদৌ থাকলে আরকি।
অথবা ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হবে। ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে। পরিণামে ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়বে, ফলে সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে দেনার পরিমাণ আরও বেশি হবে।
আর সেটা নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগকে আঘাত করবে এমন একটা সময়ে যখন আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উদ্যোক্তারা হয়তো ইতোমধ্যেই শঙ্কার মধ্যে আছেন। বেসরকারি বিনিয়োগের ধারাও এখন খুব ভালো অবস্থায় নেই। আরও বেশি ব্যয় সংকোচন হলে তার ধাক্কা লাগবে নিয়োগ ও মজুরির ওপর।
ভোটাররাও এতে মনঃক্ষুণ্ণ হবেন। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম এখন অনেক বেশি, আর এ সময়ই ব্যাংকঋণ নেওয়ার ফলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে। তাই, কম মজুরি ও কর্মসংস্থান সংকটের আভাস পেলে সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি হবে।
অন্যদিকে দেশের কর্পোরেট সমাজও আইএমএফ-এর ঋণশর্ত এবং ক্রমশ নাজুক হওয়া সামষ্টিক অর্থনীতির দ্বৈত ধাক্কা টের পাবে।
মুডিস ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে 'ঝুঁকি' ক্যাটাগরিতে রেখেছে। এতে ঋণপত্র খোলা যেমন আরও ব্যয়বহুল হবে, তেমনি বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রেও খরচ বাড়বে।
একই সময়ে, কর্পোরেট বাংলাদেশও উচ্চ করের নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়বে। সুদ পরিশোধের ওপর কর দেওয়া এসব প্রভাবের কেবল একটি — পাশাপাশি অনেক ছাড় তুলে নেওয়া হবে এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়বে।
তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা অর্থমন্ত্রীকে তার নির্বাচনের বছরের বাজেটের ইচ্ছায় কাঁচি চালাতে বাধ্য করবে।
টাকার অন্বেষণ
মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে গাড়ি, রান্নাঘরের প্লাস্টিকের তৈজসপত্র থেকে ঘরবাড়ি, কলম ও সিমেন্ট থেকে স্টিল — প্রস্তাবিত বাজেটে এ সবকিছুরই দাম বাড়বে। এর ফলে জীবনযাত্রার বিদ্যমান সংকট আরও বেশি গভীর হবে মানুষের জন্য।
২,০০০ টাকার সর্বনিম্ন কর ও নির্দিষ্ট কিছু সেবার জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার মতো বিভিন্ন আয়কর প্রস্তাবের কারণে সীমিত আয়ের মানুষদের জীবিকানির্বাহ কঠিন হয়ে উঠবে।
আইএমএফ-এর ৪.৭ বিলিয়ন বাজেট সহায়তা পাওয়ার অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে রাজস্ব-জিডিপি'র অনুপাত এবং দেশে আয়কর পরিশোধকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো। দেশের মধ্যবিত্ত ও তার উপরের শ্রেণির সংখ্যা চার কোটির মতো। আর এরাই আয়কর পরিধিবৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হবেন।
কর নেট সম্প্রসারণ, রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণ, অটোমেশন, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ ইত্যাদি রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে জানিয়ে বাজেট বক্তৃতায় সংসদকে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছেন, 'রাজস্ব আহরণে সকল সম্ভাবনাকে আমর কাজে লাগাতে চাই।'
'রাজস্বের পাশাপাশি কর-বহির্ভূত রাজস্বখাতে ফি/হার, সম্ভাব্য উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এ উৎসসমূহ হতে রাজস্ব আহরণে বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে,' বলেন তিনি।
বিপরীতক্রমে, ভারতে যাদের বার্ষিক আয় সাত লাখ রুপি পর্যন্ত (নয় লাখ টাকা), তাদেরকে দেশটির বর্তমান বাজেটে কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে। একই বাজেটে বেসরকারি খাতে চাকরি করা মানুষদের জন্য অবসর সুবিধার ক্ষেত্রে করমুক্ত সুবিধা তিন লাখ রুপি থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ রুপি (৩২.৫ লাখ টাকা) করা হয়েছে।
ভারত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। তারপরও দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সীমিত আয়ের মানুষদেরকে আরেকটু পরিত্রাণ দিতে কর রেয়াতের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
নির্মলা সীতারমনের দল বিজেপি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। অন্যদিক মুস্তফা কামালের দলও আগামী ছয় মাস পর নতুন করে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপাতত মনে হচ্ছে জনগণকে একটু সুবিধা দেওয়ার জন্য কামালের কাছে খুব বেশি আর্থিক সুযোগ নেই।
তিনি রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে আগামী অর্থবছরে ৪.৩০ লাখ কোটি টাকা আহরণের দায়িত্ব দিয়েছেন, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি।
এনবিআর-এর জন্য এটা একটা কষ্টসাধ্য কাজ হবে। এ বছরের এপ্রিলে এনবিআর-এর আয় মুখ থুবড়ে পড়েছে যা কোভিড-১৯ মহামারির পর দ্বিতীয়বারের মতো ২.২৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
ভর্তুকির চাপ থাকছে
আইএমএফ-এর ঋণের জন্য অঙ্গীকার করা হলেও আগামী অর্থবছরেও ভর্তুকির চাপ বজায় থাকবে। 'কৃচ্ছ্রসাধন নীতির মাধ্যমে সৃষ্ট ফিসকাল বাফার থেকে বর্ধিত ভর্তুকি ও সুদ ব্যয় এবং পুঞ্জিভূত বকেয়া ভর্তুকি ব্যয় আংশিক মেটানো হচ্ছে,' বলেন অর্থমন্ত্রী।
ইতোমধ্যে ভর্তুকিব্যয় কমানোর জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া জ্বালানি খাতে ফর্মূলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের স্থায়ী পদ্ধতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে একটি পথনকশা এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আগামী অর্থবছরেও বিদ্যুৎ ও কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোট ভর্তুকিব্যয় ধীরে ধীরে কমে আসবে, তবে পুঞ্জীভূত বকেয়ার কারণে ভর্তুকি ব্যয়ের চাপ পুরোপুরি কমিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে।
তিনি বলেন, সার, জ্বালানি, ও গ্যাসের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় কোভিড-পূর্ববর্তী বছরগুলোর এক শতাংশের তুলনায় সংশোধিত চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনার বরাদ্দ বেড়ে জিডিপি'র ২.২ শতাংশ ছুঁয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য মানবপুঁজি
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য অর্থমন্ত্রী দেশের তারুণ্যের শক্তির ওপর ভরসা করছেন।
'আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ সক্রিয় এবং এদের ২৮ শতাংশ তরুণ। আগামী দিনগুলোতে উন্নত বাংলাদেশের দিকে আমাদের স্মার্ট যাত্রার চ্যাম্পিয়ন হবে এ তরুণেরা,' বলেন তিনি।
কিন্তু গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ ছাড়া প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরিতে আর তেমন কিছু দেওয়ার মতো নেই অর্থমন্ত্রীর কাছে।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ এখনো জিডিপি'র এক শতাংশের কম। আর শিক্ষায় এ বরাদ্দ জিডিপি'র দুই শতাংশের কিছু বেশি। অর্থাৎ জনগণকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য নিজেদের পকেট থেকে আগের তুলনায় বেশি ব্যয় করতে হবে।
সময় সংকটময়, তবু সুদিনেরই আশা
বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল যুদ্ধাবস্থা ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার লক্ষণের কারণে অর্থমন্ত্রী সামনের দিনগুলো কঠিন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন 'অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সাথে' এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে।
কৃচ্ছ্রসাধনের অভ্যাস করে ও রাজস্ব যোগানে নতুন খাত সৃষ্টির আহ্বান করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আগামী অর্থবছরে আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।' তিনি জনসাধারণের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ কমানোর জন্য ভ্রমণ করের হার বিভিন্ন ধরনভিত্তিক বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
'এতে এক দিকে আমাদের অধিক পরিমাণে রাজস্ব যোগান হবে এবং অন্য দিকে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে,' মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া ও বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়া, বিশেষ করে, বাংলাদেশের বাণিজ্য ও প্রবাসী আয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে আইএমএফ-এর প্রক্ষেপণের ওপর ভরসা রাখছেন অর্থমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানির মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসা, বিশ্ব অর্থনীতির অনুকূল পরিবর্তন এবং একই সাথে কোভিড পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পূর্ণগতি সঞ্চার এবং অর্থবছরের শেষে কৃষিখাতে ভাল ফলন — এসবের কারণে অর্থমন্ত্রী এ বছরের জিডিপি'র ৬.৩ শতাংশ থেকে আগামী অর্থবছরে ৭.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা প্রকাশ করেছেন।
'প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা ক্রমান্বয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি থেকে বের হয়ে এসে মেগাপ্রকল্পসহ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারক চলমান ও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করব,' বলেন তিনি। তিনি আশা করেন, সরকারি উচ্চ বিনিয়োগ উৎপাদন খাতে বেসরকারি পুঁজির পথ প্রশস্ত করবে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা এবং দেশে খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য নেওয়া উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি 'অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত' থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় শিকার, কিন্তু বয়স্ক ও বিধবাভাতার সুবিধাভোগীরা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় মাসে কেবল ৫০ থেকে ১০০ টাকার সুবিধা পাবেন। দুই ক্ষেত্রেই সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক লাখ বেড়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম যদি শেষ পর্যন্ত চালু করা হয়, তাহলে তা সরকারি চাকরিজীবী বাদে অন্যদের জন্য দারুণ সহায়ক হয়ে উঠবে।
কীভাবে বহিঃখাত দুর্বল হয়েছে; আমদানি প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছে; চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হয়েছে; রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন ও বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ফলে আর্থিক হিসাব নেতিবাচক অবস্থানে চলে এসেছে ইত্যাদি বিষয় অকপট স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী।
পরিস্থিতির গভীরতার দিকে ইঙ্গিত করে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবের যুগপৎ ঘাটতি লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে জানান অর্থমন্ত্রী। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কীভাবে নতুন করে গঠন করা হবে, টাকার মান আরও কমা কীভাবে প্রতিরোধ করা যাবে, কীভাবে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো যাবে, ইত্যাদি বিষয়ে তেমন আলোচনা করেননি তিনি।
বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশে সীমিত রাখার ব্যাপারে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী। এ ঘাটতি চলতি অর্থবছরে আরও বেশি।
ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ন্যূনতম ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ক্রমশ বন্ধ করার ঘোষণা
দেন।
তিনি আরও বলেন, সতর্ক ও সমন্বিত নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হবে।
শিল্পখাতে কিছুটা সান্ত্বনা
সাধারণত ভোটের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনের বছরের বাজেটে উদার সব ছাড় ও প্রণোদনার ঘোষণা থাকে। কিন্তু আগামী বছরের বাজেট সেদিক থেকে অনেক আলাদা। তবে এ বাজেটে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের সাথে যুঝতে থাকা ব্যবসা খাতের জন্য কিছুটা সান্ত্বনা রয়েছে।
বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং আরও কিছু খাতে শুল্কছাড় দেওয়ার মাধ্যমে নতুন বাজেটে স্থানীয় শিল্পের জন্য কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর আশা, লজিস্টিকস খাতে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল, ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কারের ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ আগামী অর্থবছরে বেড়ে জিডিপি'র ২৭.৪ শতাংশ হবে।
শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর আইনের সংস্কারসহ আরও কিছু সংস্কার-উদ্যোগের লক্ষ্য ব্যবসা করার সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে সহজতর করা।