বাজারে প্যাকেটজাত চিনি উধাও, সংকট খোলা চিনিরও
রাজধানীর বাজারে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। একইসঙ্গে, সংকট দেখা দিয়েছে খোলা চিনিরও। এতে আবারও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে এই নিত্যপণ্য।
শুক্রবার (১৬ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখ যায়, এসব বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। অর্থাৎ, নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পর গত মাসের শুরুর দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির খুচরা মূল্য কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ানোর অনুমতি দেয়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে গত এক বছরে চিনির দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। গত বছর প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৪ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে প্যাকেটজাত চিনি পাচ্ছেন না তারা। আর খোলা চিনি চাহিদার তুলনায় কম পেলেও তার সঙ্গে বাধ্যতামূলক আটা অথবা চা পাতা নিতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের হাজী মিজান এন্টার প্রাইজের বিক্রয় কর্মী মোহম্মদ কবির বলেন, "প্রায় ২০ দিন ধরে কোম্পানির লোকেরা প্যাকেট চিনির অর্ডার নেয় না। আর খোলা চিনি কিনলে এরসঙ্গে আটা অথবা চাপাতা কিনতে হয়। এরপরও খোলা চিনি পাইকারি কিনতে হয় ১২৫ টাকা করে। চিনি বিক্রি করে লাভ নেই।"
কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী আলী হোসেন বলেন, "দোকানে অনেকে চিনি না পেয়ে অন্য জিনিসও কিনতে চায় না। সরকার দ্রুত যেন বিষয়টি সমাধান করে দেয়। বাজারে যেন পণ্যের সরবরাহ থাকে। আমরা বিপদে রয়েছি।"
চিনির সংকটের কারণ হিসেবে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারা, আমদানিতে শুল্ক বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন মিলাররা। আর এজন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে চিনি আমাদানিতে শুল্ক কমানোসহ দেশের বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।
রমজান মাসে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চিনি আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে ৩০ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। একইসঙ্গে, সরকার অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর থেকে টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে টনপ্রতি ৬ হাজার টাকা নির্দিষ্ট শুল্ক প্রত্যাহার করে। তবে এ সুবিধা এখন বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম রহমান।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যে শুল্ক কমিয়েছিল সেটা আবার বাড়িয়ে দেওয়ায় কেজিতে ৮ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। তার ওপর আন্তর্জাতিক বাজারে এখন চিনির দাম বেশি। ডলারের দাম বেড়ে গেছে। আবার ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এসব কারণে চিনির দাম বাড়ছে।"
তিনি বলেন, "চিনির ৫০ কেজির বস্তার সাপ্লাই দিতে পারছি না। দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে প্যাকেটজাত চিনি তৈরি করলে খরচ বেশি হয়। ছোট প্যাকেট তৈরি করলে কেজিতে সাড়ে চার টাকার মতো খরচ হয়। সেটা বিক্রি করতে গেলে আবার বলা হবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।"
"দাম কমার জন্য সরকার এখন আমাদের সাবসিডি দিতে পারে। সরকারের কাছে আমরা চিনির দাম বাড়ানো জন্য আবেদন করেছি। সেখানে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৪০ টাকার মতো প্রস্তাব করা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
গত ১১ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় ভোগ্যপণ্যের বর্তমান সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এই প্রতিবেদনে চিনির সরবরাহ ঘাটতির তথ্য উঠে আসে।
এতে বলা হয়, ২০২৩ অর্থবছরে চিনির সরবরাহ ঘাটতি ৭২,০০০ টনে দাঁড়িয়েছে। চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন, কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমদানি কম হওয়ায় এই সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে, ভারত থেকে আমদানির পরও চিনির পাশপাশি গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার খুচরা বাজারে স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।