চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ কমেছে ১৯%
ব্যাংকিং খাতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং তারল্য সংকটের কারণে এ বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (সিএমএসএমই) ঋণ বিতরণ কমেছে ১১,৫৪৩ কোটি টাকা বা ১৯.০৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে ৪৯,০৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা আগের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৬০,৬১১ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের সার্বিক আমদানি ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় এই খাতে ঋণ বিতরণও কমছে। যদিও মার্চ ও জুন প্রান্তিকে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ কম থাকে। পরবর্তী দুই প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ঋণ বেশি বিতরণ করে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ কমেছে ২,৬৪৮ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো এই খাতের ২,৮৯,৩৪৭ জন উদ্যোক্তাকে ৫১,৭১৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী শাহাদৎ হোসেন টিবিএসকে জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছ তাকে।
তিনি বলেন, "ক্রেতাদের কাছে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পণ্যের যোগান কম থাকায় তিনমাস ধরে আমাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। যেসব ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছি, ভালো ইমেজ থাকার পরেও তারা ঋণ দিচ্ছে না।"
"এক কোটি টাকার ঋণের জন্য ২০ বার পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে নানান ধরনের কাগজপত্র চেয়ে নিচ্ছে, অথচ ঋণ দিচ্ছে না," যোগ করেন তিনি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন,"পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন ধীরগতিতে চলছে। আমাদের দেশেরও একই অবস্থা, যার কারণে সার্বিকভাবে ঋণ বিতরণ কমছে।"
"সিএমএসএমই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যার কারণে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে, এটিও ঋণ বিতরণ কমার আরেকটি কারণ," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, মূল্যস্ফীতির লাগম টানতে ও ব্যাংকে তারল্যের যোগান দিতে গত বছরের জুলাইয়ে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ খাতে ৩ বছরের জন্য ২৫,০০০ কোটি টাকার রিফাইন্যান্স স্কিম গঠনের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, "চলতি বছরের জুলাইয়ের ১০ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১৪,০০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। তবে আমাদের টার্গেট ছিল আরও বেশি ঋণ বিতরণ করা। ডিসেম্বর পর্যন্ত আশা করি পুরো ঋণ বিতরণ হবে।"
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই স্কিমের তহবিলের মেয়াদ ৩ বছরের জন্য নির্ধারণ করেছে; তবে প্রয়োজনে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই স্কিম থেকে ২ শতাংশ হারে তহবিল নিতে পারে ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ হারে গ্রাহকের কাছে ঋণ বিরতণ করতে পারে।
ঋণ বিতরণ কম হওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, "ব্যাংকগুলোর এসএমই ঋণ বিতরণে আগ্রহ কম হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এখানে ইন্টারেস্ট রেট (সুদের হার) কম এবং অপারেটিং কস্ট (পরিচালন ব্যয়) বেশি।"
"তবে চলতি জুলাই মাস থেকে সিএমএসএমই অপারেটিং কস্ট হিসেবে অতিরিক্ত ১ শতাংশ ইন্টারেস্ট গ্রহণ করতে পারবে, যার কারণে ঋণের গ্রোথ বাড়বে বলে আশা করি," যোগ করেন তিনি।