আমদানির ডিম ১২ টাকায় মিলবে তো!
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ডিম আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশের আমদানির খবরে ইতোমধ্যেই ভারতে ডিমের দাম বেড়ে গেছে এবং প্রতিটি ডিমে দুই টাকা করে শুল্ক থাকায় বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ডিমের বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এই দামে ডিম বিক্রি না হওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি পিস এবং পরবর্তীতে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে আরও ৬ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু এতদিন আইপি না পাওয়ার কারণে এখনো ডিম আমদানির এলসি-ই খুলতে পারেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
আমদানিকারকরা বলছেন, ২ অক্টোবর আমদানিকারকদেরকে আইপি দেয়া হয়েছে। এখন এলসি খুলে ডিম আমদানি করতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
তবে সংকট হয়েছে অন্য জায়গায়। বাংলাদেশের আমদানির খবরে ভারতে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। ভারতে প্রতিটি ডিমের দাম এখন ৫.৭০ রুপির আশেপাশে, যা আমদানির অনুমতি পাওয়ার আগে ছিল ৪.৮০-৪.৯০ রুপি করে।
আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতিটি ডিম বাংলাদেশে আসতে খরচ পড়বে কমপক্ষে ১০ টাকা। কারণ হিসেবে বলছেন, একদিকে ভারতে ডিমের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে প্রতিটি ডিমের উপর সরকারকে অন্তত ২ টাকা করে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ডিম আমদানির উপর বর্তমানে ৩৩ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে।
চিজ গ্যালারি ১ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২রা অক্টোবর আইপি পেয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'ভারতে ডিমের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে ৩৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। দেশে আসতে আসতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়বে ১০ টাকা, যা কমপক্ষে ১০.৩০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
জানা গেছে, ১০.৩০ টাকার ডিম খুচরা বাজারে অন্তত ১২-১২.৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমদানির অনুমতি পাওয়ার পরপরই টাইগার ট্রেডিং লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাইফুর রহমান টিবিএসকে জানিয়েছিলেন, প্রতিটি ডিম সর্বোচ্চ ৯-১০ টাকায় ক্রেতারা কিনতে পারবে।
এদিকে ঢাকার বাজারে প্রতিটি ডিম খুচরা বাজারে বর্তমানে ১২-১২.৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। দেশের খামারিরা বলছেন করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বেড়ে যাওয়া ফিডের দামের প্রভাবে অনেক খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারণে ডিমের উৎপাদন পৌনে তিন কোটিতে নেমেছে। অন্যদিকে মাছ, মাংস, সবজির দাম চড়া হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে ডিমের উপর। এই পরিস্থিতির সুযোগে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং প্রতিটি ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১৫-১৬ টাকায়।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত ডিম আমদানির জন্য নতুন কোন প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি। তবে আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটা বিবেচনা করবে।
কাঁচামরিচের দাম কমছে না
ঢাকা ও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা কেজি দরে। গত এক সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল ১৫০-১৮০ টাকার মধ্যে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মরিচের সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে ভারতে মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশে উৎপাদনের মৌসুম না হওয়ার কারণেই সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।
চট্টগ্রামের বাজারে অবশ্য ২৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে মরিচ বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের টিবিএস প্রতিনিধির তথ্য বলছে, পাইকারী ব্যবসায়ী এবং আড়তদাররা বলছেন, বৃষ্টিপাতের কারণে হঠাৎ করে কাঁচামরিচের সরবরাহ কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কাঁচামরিচের দামে। দাম বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে বিক্রির পরিমাণও।
চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী কাঁচাবাজার, চকবাজার, দেউড়ি কাঁচাবাজার, আসকারদীঘির পাড় কাঁচাবাজার, ব্যাটারি গলি কাঁচাবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার, ভ্রাম্যমাণ খুচরা বিক্রেতা এবং সুপার শপ স্বপ্ন, শপিং ব্যাগ ঘুরে দেখা গেছে কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ সর্বোচ্চ ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ জায়গায় ২৪০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হচ্ছে।
স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজারে ১২ থেকে ১৫ ট্রাক কাঁচামরিচের চালান আসতো। প্রতি ট্রাকে ১৩ মেট্রিক টন করে ১৫০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন মরিচ বিক্রি হতো এই পাইকারি বাজারে। বর্তমানে প্রতিদিন ৭-১০টি ট্রাক আসে কাঁচামরিচের।