ডলারপ্রতি রেমিট্যান্স রেট বেড়ে দাঁড়ালো ১২৪ টাকা
মঙ্গলবার দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা থেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স রেট দিয়েছে, যা সরকার নির্ধারিত হার ১১০.৫০ টাকার চেয়ে অনেক বেশি। এতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।
গত ২২ অক্টোবর রেমিট্যান্স আয়ে প্রণোদনা সীমা তুলে দেওয়ার পর এটিই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স রেট।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) আমদানিকারকদের জন্য ডলার বিক্রির হার সর্বোচ্চ ১১১ টাকা নির্ধারণ করলেও রেমিট্যান্স এবং আমদানি হারের মধ্যে ডলারপ্রতি ১৩ টাকা ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ব্যাংক মঙ্গলবার রেমিট্যান্স ক্রয় করেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই ব্যবধান কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করার বিষয়ে আলোচনা করতে বুধবার এবিবি এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত মাসে ১২০ টাকায় থাকা রেমিট্যান্স রেট, চলতি মাসের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, ক্রয় আর বিক্রয় হারের মধ্যকার বিশাল ব্যবধান দুর্নীতির সুযোগ করে দিচ্ছে।
"আমরা যদি ডলারপ্রতি ১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স কিনি এবং ১১১ টাকায় আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করি, তাহলে আমাদের মাসে অন্তত ১৩০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।"
তিনি বলেন, এ লোকসান এড়াতে তার ব্যাংককে আমদানিকারকদের সাথে গোপন লেনদেনে যেতে হবে।
রেমিট্যান্স রেট এবং আমদানির হারের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধানের কারণে বেশিরভাগ ব্যাংকই গোপন লেনদেনের সাথে জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, "আগে এই ব্যবধান ডলারপ্রতি ১ টাকা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত হলেও, বিস্ময়করভাবে এখন ১৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়া হলে এই ব্যবধান আরও বেশি হবে।"
২২ অক্টোবরের আগে, রেমিটাররা সর্বোচ্চ ৫% প্রণোদনা পেতেন, যার মধ্যে ২.৫% সরকারি প্রণোদনা এবং ২.৫% প্রণোদনা ব্যাংকগুলো দ্বারাই অর্থায়নকৃত।
পরে ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আয়ে ২.৫% প্রণোদনা দেওয়ার সীমা তুলে নেয় এবিবি। এতে কোনো ব্যাংক চাইলে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে।
তবে, একটি ব্যাংক কত শতাংশ প্রণোদনা দেবে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
এক সিদ্ধান্তে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন সকল বৈদেশিক মুদ্রা একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হার তথা ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় ক্রয়ের কথা জানায়, যা রেমিটার এবং রপ্তানিকারক উভয়ের জন্য প্রযোজ্য হবে।
এদিকে প্রণোদনা দেওয়ার সীমা তুলে নেওয়ার পর, কিছু ব্যাংকের বোর্ড তাদের প্রণোদনার সর্বোচ্চ সীমা ২.৫% অনুমোদন করেছে, যার অর্থ দাঁড়ায় তারা সরকারের প্রস্তাবসহ সর্বোচ্চ ৫% প্রণোদনা প্রদান করবে।
একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫% প্রণোদনার সাথে ব্যাংকগুলোকে রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১৩০ টাকা ব্যয় করতে হবে।
অন্যদিকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রপ্তানিকারকরাও বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের সাথে জড়িত; তারা সরাসরি আমদানিকারকদের কাছে উচ্চ হারে তাদের আয় বিক্রি করছেন, যেটি বেআইনি।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত ডিলার লাইসেন্স পেয়েছে। কোনো ব্যক্তি বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করতে পারে না।
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কায়
রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকারের ২.৫% প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকগুলোও আরও ২.৫% প্রণোদনা দিতে পারবে। সম্প্রতি (এবিবি-বাফেদার) এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত এই খরচ সিএসআর এর ব্যয় খাতে দেখাবে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আহরণ আরও ব্যাহত হবে।
তিনি বলেন, "নীতিমালা রয়েছে, ব্যাংক নিট মুনাফায় থাকলে সে সিএসআর খাতে ব্যয় করতে পারবে। রাষ্ট্রায়ত্ব অধিকাংশ ব্যাংকের নিট মুনাফায় নেই, সেক্ষেত্রে এই ব্যয় কীভাবে দেখাবে! এছাড়া সিএসআর ব্যয়ের নির্দিষ্ট খাত উল্লেখ রয়েছে। রেমিট্যান্সের প্রণোদনার অতিরিক্ত ব্যয় এই খাতে নীতিমালা অনুযায়ী দেখানোর সুযোগ নেই। এমন নির্দেশ বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত সার্কুলার করে স্পষ্ট করে দেওয়া।"
আরেকটি বেসরকারি খাতের ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, ব্যাংকগুলোকে তাদের প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের ১০% আন্তঃবাজারে বিক্রি করতে হবে। আন্তঃবাজারের সর্বোচ্চ রেট হবে ১১৪ টাকা। অথচ ব্যাংকগুলো ডলার কিনে আমদানি এলসি খুলতে পারবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকায়, যা বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি করবে।
তিনি আরও বলেন, "ব্যাংকগুলোকে আন্তঃবাজারে ১০% ডলার বিক্রি করতে বাধ্য করা– কখনোই ভালো মার্কেটের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। কিছু ব্যাংক বিক্রি করলেও তা হবে শুধু 'আইওয়াশ'।"