রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ১১৫ টাকার বেশি হতে পারবে না: এবিবি-বাফেদা
অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) রেমিট্যান্সের জন্য প্রতি ডলারের দাম সরকার ও ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ ১১৫ টাকার বেশি না দিতে নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
ব্যাংকগুলো ১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স কিনছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার (৮ নভেম্বর) এবিবি ও বাফেদার যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
বৈঠকে এবিবি ও বাফেদার সদস্যরা বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত মূল্যে রেমিট্যান্স ডলার কিনছে, যা মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে প্রভাবিত করবে।
উচ্চমূল্যে রেমিট্যান্স কেনার কারণে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একটি ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, '৩১ অক্টোবর এক বৈঠকে এবিবি ও বাফেদা ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত ডলারহারের বাইরে ইচ্ছেমতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স আনতে নির্দেশ দেয়।'
'এটাও বলা হয়েছিল যে, এক ডলার যে দামেই কেনা হোক না কেন, গ্রাহকদের কাছে তা ১১১ টাকায় বিক্রি করতে হবে। এ ঘোষণার পরপরই ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনতে শুরু করে।
'গত বুধবার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা রেমিট্যান্সের কথা জানিয়েছে, যা সরকারি নির্ধারিত ১১০ টাকা ৫০ পয়সা হারের চেয়ে অনেক বেশি।
'তবে বৈঠকে বলা হয়েছিল, ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে তাদের ইচ্ছেমতো প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে — তবে তারা যেন প্রতি ডলারে ২–২.৫ শতাংশের বেশি প্রণোদনা না দেয়,' তিনি আরও বলেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলাপকালে একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের হারের মধ্যে বিশাল ব্যবধান দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে।
'আমরা যদি প্রতি ডলারে ১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স ক্রয় করি এবং ১১১ টাকায় আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করি, তাহলে আমাদের এক মাসে কমপক্ষে ১৩০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে,' তিনি বলেন। এ ধরনের লোকসান এড়াতে তার ব্যাংককে আমদানিকারকদের সঙ্গে গোপন লেনদেনে যেতে হবে এবং রেমিট্যান্স হারে ডলার বিক্রি করতে হবে। তবে এর জন্য তার ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের নগদ পরিচালনা করতে হবে।
আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, অনেক ব্যাংক আছে যাদের ডলারের চাহিদা বেশি। তারা অতীতে যে আমদানি এলসি খুলেছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে বেশি দামে ডলার কিনছে।
গত বছরের মাঝামাঝিতে ডলারের দর বেড়ে ১১৪ টাকা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে রেমিট্যান্সের জন্য ডলারের দাম ১০৮ টাকা এবং রপ্তানির জন্য ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে উভয়ক্ষেত্রেই ডলার কেনার হার সমান করা হয়।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডলারের দাম নির্ধারণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বিক্রয় ছিল ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছরে ছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বকেয়া বিল ১.১৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ১৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল।