ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির প্রথম দিনেই খালি হাতে ফিরলেন বহু ক্রেতা
সরবরাহের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের অনেক মানুষই গতকাল (১৪ নভেম্বর) টিসিবির (ট্রেডং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে।
মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগে ঢাকার জন্য নির্ধারিত ৩০টি স্থানে টিসিবির ট্রাকে করে চার ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু হয় মঙ্গবলবার। এ উদ্যোগের আওতায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং সয়াবিন তেল ১০০ টাকা লিটারে বিক্রির ঘোষণা দেয় সরকার।
টিসিবির প্রতিটি ট্রাক প্রতিদিন ৩০০ মানুষকে পণ্য দেবে। এতে করে ঢাকার ৯ হাজার লোকের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রত্যেক ক্রেতা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু, ২ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২ কেজি মসুর ডাল কিনতে পারবেন।
মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন কিছুটা সহজ করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির প্রথম দিনেই ঢাকাজুড়ে নির্ধারিত বিক্রয় পয়েন্টে নিম্ন-আয়ের মানুষের ঢল নামে।
রামপুরা বাজারের পাশেই টিসিবির একটি ট্রাকে সকাল ১০টায় পণ্য বিক্রি শুরু হয়। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ট্রাকের পণ্য ফুরিয়ে যায়। কিন্তু তখনও কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ লাইনে। বিক্রেতা তাদেরকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারছিলেন না যে, পণ্য সব শেষ। সবাই টাকা উচিতে ধরে পণ্য চাচ্ছিলেন। বাধ্য হয়েই ট্রাকের ব্যাক ডালা খুলে দেখানো হয়। এরপরে নিরাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে যান তারা।
এ সময় ব্যাগ হাতে ষাটোর্ধ্ব নারী ফাতেমা বারবার বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, তারা আগামীকালকেও পণ্য নিয়ে আসবেন কিনা। কিন্তু বিক্রেতা উত্তর না দিয়েই দ্রুত ট্রাক নিয়ে চলে যান।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমার স্বামী রিকশা চালায়, কিন্তু বয়সের কারণে খুব বেশি সময় কাজ করতে পারে না। তাই আয়ও কম। এজন্য কম দামে পণ্য কিনতে এসেছিলাম, দেরি হওয়ার কারণে কিনতে পারলাম না।"
রামপুরার ট্রাক সেলের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রুম্পা ট্রেডার্সের বিক্রেতা হাবিব টিবিএসকে বলেন, "৩০০ জনকে দেওয়ার সমপরিমাণ পণ্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানুষ ছিল এর চেয়ে অনেক বেশি।"
একই সঙ্গে এই বিক্রয়কেন্দ্রে পেঁয়াজ ও আলু দেওয়া হয়নি। যে কারণে ক্রেতাদের মধ্যেও ক্ষোভ ছিল।
পণ্য কিনতে আসা শারিফা বেগম বলেন, "পেঁয়াজ-আলুর কথা শুনেই আসলাম, এখন বলে এগুলো নেই। তারপরও তেল আর ডাল নিলাম।"
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সব পণ্য সংগ্রহ করতে না পারায় প্রথম দিনে অনেক ট্রাকেই পেঁয়াজ এবং আলু দেওয়া হয়নি। দু-একদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে টিসিবি ভ্রাম্যমান ট্রাক সেল শুরুর উদ্বোধন করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
টিসিবি সারাদেশে ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি আবারও পুরনো এই পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি শুরু করলো, যেখানে সাধারণ মানুষ কার্ড ছাড়াই পণ্য কিনতে পারছেন।
বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা, আলু ৫০-৫৫ টাকা, মশুর ডাল ১২০-১৫০ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮-১৭০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, "ভারত থেকে পেঁয়াজ চিনি আমদানি করা হয়। কিন্তু দুটি পণ্যের রপ্তানিই তারা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি আমদানি স্বাভাবিক রাখতে। এসব কারণে টিসিবির পণ্য আমদানি করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।"
টিসিবির চেয়ারম্যান আরিফুল হাসান বলেন, ঢাকায় কার্ডধারী ১৩ লাখ পরিবারের পাশাপাশি এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আরও দুই লাখ মানুষ ভর্তুকি মূল্যের সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় আসবেন।
উদ্বোধনের দিনে খিলগাঁও রেলগেট, মুগদা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকা, মালিবাগ রেলগেট, শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড, আজমপুর কাঁচা বাজার (উত্তরা), মতিঝিল বক চত্বর, ফকিরাপুল বাজার, আবদুল্লাহপুর মোড়, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ (ধানমন্ডি), আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায়, সচিবালয়ের ৩নং গেটের সামনে, সূত্রাপুর থানার পাশে, কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবনের সামনে, মহাখালী কাঁচাবাজার, কচুক্ষেত বাজার (ক্যান্টনমেন্ট), গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, কুড়িল বিশ্বরোড, মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলী মাজার, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর, মিরপুর ইসিবি চত্বর, কলেজগেট (হৃদ্রোগ হাসপাতাল), মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, ধানমন্ডি জিগাতলা, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হল, রামপুরা বাজার, শাহজাদপুর বাজার, মিরপুর কালশীর মোড়, বেগুনবাড়ি (দীপিকার মোড়) ও শাহিনবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় টিসিবি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করছে।