অবরোধে দাম বেড়েছে চাল, আটা, মুগ ডালের; কমেছে সবজির দর
অবরোধ-হরতালসহ নানান অস্থিরতায় রাজধানীতে চাল, আটা, মুগ ডালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আবারও বেড়েছে।
সরবরাহ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং দেশে ডলার সংকটে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার এবং কল্যাণপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখ যায়, গত মাসের তুলনায় আটা এবং মুগ ডালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আটার দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে, আর মুগ ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা।
ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মোহম্মদ আলী হোসেন জানান, দুইকেজি প্যাকেট আটার দাম এখন ১২০ টাকা, যা গতমাসে ছিল ১১০ টাকা। বিআর২৮ চাল এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কিছু দোকানে দুই কেজির প্যাকেট আটা রয়েছে যেগুলোর গায়ে লেখা ১৩০ টাকা। মোহম্মদ আলি হোসেন বলেন, "নতুন কিছু পণ্য আসছে সেগুলোর গায়ে ১৩০ টাকা লেখা।
আটার দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
মেসার্স হাজি অ্যান্ড সন্স এর বিক্রিয় কর্মী মোহম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, খোলা আটা ৫০ কেজির বস্তা একমাস আগে পাইকারি বিক্রি ছিল ১,৮৫০ থেকে ১,৯০০ টাকায়; এখন সেটি ২,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে নুরুল ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের ম্যানেজার মোহম্মদ মইন বলেন, "মুগ ডাল কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এক মাস আগে ১১২ টাকা পাইকরি কেনা ছিল, এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে ১৩২ টাকা কেজি। সেই ডাল আমরা ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি।"
এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকাতেও দেখা যায়, গত একমাসে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। একই ট্রাকের ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা।
"এত বেশি ভাড়া দেওয়া সত্ত্বেও খালি ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেনাপোল বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে," যোগ করেন তিনি।
অন্যান্য নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে প্যাকেটজাত চিনির দামও। বাজারে দেখা দিয়েছে চিনি সংকট। যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৫০ টাকা।
কল্যাণপুরের হাওলাদার রাইস এজেন্সির বিক্রয় কর্মী মোহম্মদ ফেরদৌস বলেন, "এক কেজি চিনির প্যাকেটে লেখা থাকে ১৩৪ টাকা। আমাদের পাইকারি কিনতে হয় ১৪৮ টাকায়। এখন আমরা 150 টাকা বিক্রি করলে আমাদের সঙ্গে ক্রেতারা দামাদামী করে, তারা বলে প্যকেটের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে কেন বিক্রি করছি। ভোক্তা অধিকারের লোক আমাদের জরিমানা করে। তাই চিনি বিক্রি বন্ধ রাখছি। বাজার স্বাভাবিক হলে বিক্রি করবো।"
তিনি বলেন, অনেকে প্যাকেটের চিনি খুলে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে।
সিটি গ্রুপের কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বিদ্যমান চিনির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে কোনো লাভ হয়নি। এই প্রত্যাহারের প্রভাব বাজারে প্রতিফলিত হতে সময় লাগবে।
সবজির দাম নিম্নমুখী
এদিকে শীতকালীন সবজির বাজারে আসায় দাম কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির।
কল্যাণপুর ঘুরে দেখা যায়, সিম প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মাঝারি আকারের একটি ফুলকপি ৪০ টাকা, ঢেঁরস ৬০ টাকা এবং পটলের কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর কারওয়ান বাজারে সিম ও মুলা ডেকে ডেকে বিক্রি করছে ৩৫ টাকা কেজিতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত একমাসে কেজিতে প্রায় ২০-২৫ টাকা কমেছে সবজির দাম।
দাম বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, ডিম ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরামূল্য বেধে দিয়েছিল। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা, আলু ৩৫-৩৬ টাকা কেজি এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনও আলু ও পেঁয়াজ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
আলু ৫০ টাকা কেজি আর দেশি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতি ডজন ডিম কারওয়ান বাজারে ১২০ টাকা এবং মগবাজার ও কল্যাণপুরের গলির দোকানে ১৩৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।