হয়রানি মুক্ত সেবা, সময়োপযোগী ফি সমন্বয় কর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর অন্যতম শর্ত
সরকারের কর-বহির্ভূত রাজস্বের অন্যতম উৎস হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ। তবে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও জবাবদিহিতার ঘাটতির ফলে বাংলাদেশের এ ধরনের আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই লোকসানি। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাওয়া যায় না। বরং লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বাজেট থেকে মূলধন সহায়তা, ভর্তূকি ইত্যাদি দিতে হয়।
একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে নিয়মিত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। এর বাইরে অন্যান্য যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিভিডেন্ড দেয়, তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে। এরমধ্যে দেখা যাচ্ছে এসব ব্যাংক মিলে বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংকের মত সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানে মূলধন দিচ্ছে। এ ধরনের নীতি যদি অব্যাহত থাকে এবং অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম দূর করা না গেলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে না।
রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সেবার বিপরীতে আদায় করা ফি বা মূল্য থেকেও সরকার কর-বহির্ভূত আয় পায়। এসব ফি সময়োপোযোগী নয়। এবং ফি নির্ধারণে কোনো ফর্মূলা অনুসরণ করা হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবারে অনেক বাড়ানো হয়। তখন আবার জনসাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
যেমন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা জমি নিবন্ধন, ফ্লাট নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। জনসাধারণের এ ধরনের দাবি মাথায় রেখে সরকারও সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য এ ধরনের ফি একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর এবং নির্দিষ্ট ফর্মূলা অনুযায়ী সমন্বয় হওয়া দরকার।
এর বাইরে দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেবার বিপরীতে কর- বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহ কম হচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীদের নানান ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ আছে। একই অবস্থা বিআরটিএসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। এসব সেবা যদি সুষ্ঠুভাবে কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া নাগরিকদের দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে সেবা মূল্য বাড়ানো হলেও নাগরিকরা তা মেনে নেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের কর- বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেজন্য রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অনিয়ম দূর করে ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। একইভাবে জনসাধারণকে হয়রানিমুক্তভাবে সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক: জাহিদ হোসেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ