দারিদ্র্যের হার কমানোর পথে বাধা হচ্ছে বর্ধিত পরোক্ষ কর: গবেষণা
বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের দুই-তৃতীয়াংশই এখনও আসে হয় মূল সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আমদানি করের মতো পরোক্ষ কর থেকে, এবং এর ভার ধনী-গরিব সবার ওপরেই পড়ে। এই পরোক্ষ কর দেশের দারিদ্র্যের হারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, যার কারণে তা প্রত্যাশিত মাত্রায় কমছে না।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) পরিচালিত এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পরোক্ষ করের বোঝা এক শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়লে দারিদ্র্য বাড়ে ০.৪২ শতাংশ।
শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে এই গবেষণার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০০০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচের পরিবারগুলোর ওপর পরোক্ষ করের বোঝা ছিল ২ শতাংশ; ২০১৬ সালে তা বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা পরিবারগুলোর এ বোঝা কম।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমেই কমছে। এ প্রসঙ্গে র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'যদি পরোক্ষ কর কম থাকত প্রত্যক্ষ করের তুলনায়, তাহলে দারিদ্র্য আরও বেশি হারে কমত। অর্থাৎ বাড়তি পরোক্ষ করের কারণে দারিদ্র্য প্রত্যাশিত হারে কমেনি।'
হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের (এইচআইইএস) তথ্য উল্লেখ করেন তিনি। এ জরিপ অনুসারে, গত দুই দশকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য অর্ধেকেরও বেশি কমে এখন ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
আয়কর বা প্রত্যক্ষ কর মানুষের আয়ের ওপর আদায় করা হয়। অর্থাৎ যার আয় যত বেশি, তিনি তত বেশি কর দেবেন। বর্তমানে কোনো ব্যক্তির বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে তিনি আয়করমুক্ত থাকেন। এর অর্থ হলো, যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছেন, তাদের কাছ থেকে ইনকাম ট্যাক্স আদায় করা হয় না।
অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যে যে কর পরিশোধ করা হয় বা স্থানীয়ভাবে বাজারে পণ্য বিক্রির সময় যে ভ্যাট ধার্য করা আছে, তা সব ক্রেতার ওপর বর্তায়। দরিদ্র ব্যক্তিদেরও ওই পণ্য কিনতে হলে ভ্যাট দিতে হয়। আবার আমদানিতে পরিশোধ করা কর পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়।
সুপারিশ
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ১০-১৫ বছরব্যাপী ধাপে ধাপে কর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারকে। সেইসঙ্গে করভিত্তি সম্প্রসারণ এবং কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স বাড়ানোর জন্য প্রথাগত পদ্ধতি থেকে সরে এসে আরও ব্যবহারকারীবান্ধব ও অটোমেটেড প্রযুক্তি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ট্যাক্স নোটিফিকেশন ও রিমাইন্ডারের জন্য উন্নত সিস্টেমে বিনিয়োগ করা উচিত বলেও সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। কারণ কর আদায়ের প্রক্রিয়া অটোমেটেড হলে দক্ষতা বাড়ে এবং ত্রুটি কমে আসে।
প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর প্রচেষ্টা
প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বাজেটেও করদাতার সংখ্যা বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের উদ্যোগের কারণে করদাতার সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়েছে। এছাড়া চলতি বছর কর রিটার্ন দাখিল ৪০ লাখ হতে পারে।'
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ টিবিএসকে বলেন, প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে এনবিআরের অটোমেশনের বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে করদাতাবান্ধব পরিবেশও তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'কেবল প্রত্যক্ষ কর নয়, পরোক্ষ কর আদায়ের ক্ষেত্রেও কার্যকর অটোমেশনের প্রয়োজন রয়েছে।'