ছয় বছরে এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বেড়েছে চারগুণ
দেশের চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংকের ছয় বছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৩,০৯০ কোটি টাকা। যা ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় চার গুণের বেশি।
এনআরবিসি ব্যাংকের ২০২৩-এর বার্ষিক রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৭ সালের বার্ষিক রিপোর্ট শেষে ব্যাংকের ডিপোজিটির পরিমাণ ছিল ৪,৫২৩ কোটি টাকা। যা ২০২৩-এর ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬,১১৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকের আমানতের ন্যায় গত ছয় বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। ২০১৭ সাল শেষে এনআরবি ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪,৩০০ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সাল শেষে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪,৫০৮ কোটি টাকা।
চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটি ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল ৫৩ জন প্রবাসী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর এনআরবিসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পারভেজ তমাল।
দুর্নীতির দায়ে ডুবতে বসা ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের যোগ দেয়ার পর সব ধরনের সূচকই ভালো হতে থাকে। এই ছয় বছরের ব্যবধানে এনআরবিসি ব্যাংক এখন সমসাময়িক ব্যাংকগুলোর তুলনায় সবার শীর্ষে বলে মনে করছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।
নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফা অর্জনের দিক থেকেও এগিয়ে আছে ব্যাংকটি।
সর্বশেষ ২০২২-এর অপারেটিং প্রফিট ও নিট প্রফিট যথাক্রমে দেখা যায় ৪০৩ ও ১৭৩ কোটি টাকা। যদিও এটা ২০১৭ সালে ছিল যথাক্রমে ১৮৪ ও ৯২ কোটি টাকা।
এনআরবিসি ঋণ আমানতের ক্ষেত্রে সফলতার পাশাপাশি ব্যাংকের নতুন কর্মসংস্থানও কয়েকগুণ বেড়েছে। ব্যাংকটির ২০১৭ সালে কর্মীর সংখ্যা ছিল ৬১৭ জন। ২০২৩ সালের শেষে তা ৬ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৮৩২ জনে।
এছাড়া ২০১৭ সালে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ছিল মাত্র ৬১টি। ২০২৩ সাল শেষে শাখা-উপশাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০টি।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এনআরবিসি ব্যাংক সমসাময়িক সকল ব্যাংকের তুলনায় অনেক এগিয়ে। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। মানুষের মধ্যে সেবা কার্যক্রম বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করতে চাই। প্রবাসীদের জন্য রেমিটেন্সসহ অন্যান্য সেবা আরো সহজভাবে উপস্থাপন করতে চাই।"
তিনি আরও বলেন, "টেকসই অগ্রযাত্রার জন্য আমরা আমাদের সেবা কার্যক্রমের সকল স্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করছি।"
এনআরবিসির সার্বিক সূচকগুলো নিয়ে চেয়ারম্যান ফারভেজ তমাল বলেন, "প্রতি বছর আমাদের একটি অভিন্ন লক্ষ্য থাকে। সেটি হলো, কত নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যায়, সেই চেষ্টা করা। এ লক্ষ্যে ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি কার্যক্রম এ বছরও অব্যাহত থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "কর্মসংস্থান তৈরিই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য ব্যাংকের যে পরিমাণ আমানত রয়েছে, তা দিয়ে গ্রামে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর পাশাপাশি বড় গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করব।"
গত ৬ বছরের ব্যবধানে এনআরবিসি ব্যাংক এখন সমসাময়িক ব্যাংকগুলোর তুলনায় সবার ওপরে। তমাল বলেন, "নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে এনআরবিসি ব্যাংক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর তুলনায়ও অনেক এগিয়ে। আমরা নতুন ব্যাংক হিসেবে এক কোটির ওপরে গ্রাহক সেবা দিয়ে থাকি।"
এনআরবিসি চেয়ারম্যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে সারাদেশে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, "বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে আমরা খুব ভালো করছি। এই কাজটা এ বছর সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।"
কর্মসংস্থান তৈরি ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে তমাল বলেন, "আমাদের স্লোগান হচ্ছে—এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। সেটা সফলভাবে বাস্তবায়ন করাই চলতি বছর ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।"
তমাল জানান, ক্ষুদ্র ঋণ কত কম সময়ের মধ্যে এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা যায়, সেটা নিশ্চিত করাও অন্যতম লক্ষ্য। অনলাইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণের সীমা হবে ২০ হাজার টাকা।
তমাল বলেন, "ক্ষুদ্র ঋণের পাশাপাশি ন্যানো ঋণেও আমরা যাব। এর মাধ্যমে আরও অনেক বেশি মানুষকে আমরা সেবা দিতে পারব। পাশাপাশি আমরা খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেব।"