বিনিময় হার নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসছে আইএমএফ
বাংলাদেশে এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে 'ক্রলিং পেগ' বাস্তবায়নসহ নানান বিষয় নিয়ে আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি টিমের সঙ্গে দুটি আলাদা মিটিং করবে আইএমএফ। এসব মিটিংয়ে এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণে ক্রলিং পেগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হবে।"
"এছাড়া বর্তমানে কী প্রক্রিয়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান নির্ধারিত হচ্ছে, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে। তারা চাইছে, ডলারের রেটকে বাজারভিত্তিক করতে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ডলারের রেট বাজারভিত্তিক করা সম্ভব নয়। এছাড়া, ক্রলিং পেগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী কী সমস্যা দেখছে, সেগুলোও আলোচনায় আসবে," বলেন তিনি।
'ক্রলিং পেগ' হলো দেশিয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মুদ্রার দরের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে।
আইএমএফ থেকে ঋণের কিস্তি ছাড় করার ক্ষেত্রে নিট রিজার্ভ রাখা বড় কোনো বাধা নয় মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেষ্টা করছে রিজার্ভের হেলথ ভালো রাখার। সেজন্য চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করার পাশাপাশি বাজার থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি কিনেও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"
বুধবার থেকেই আইএমএফ দল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইত্যাদি সংস্থার সঙ্গে মিটিং শুরু করবে। মিটিং চলবে আগামী ৮ মে পর্যন্ত। প্রতিবছর বাজেটের আগে আইএমএফের একটি দল এ সময় ঢাকায় আসে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন গত ১৮ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি সেভাবে হয়নি। সময় এসেছে বাংলাদেশকে এখন মুদ্রার নমনীয় বিনিময় হারের দিকে যেতে হবে।"
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে ৪.৭ বিলিয়ন ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ বেশকিছু শর্ত দেয়। রিজার্ভ ছাড়া প্রায় সব শর্তই পূরণ করে দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় কিস্তি পায় গত ডিসেম্বরে। দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার আগে সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে, গত জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
তবে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে অব্যাহতি চেয়েছিল বাংলাদেশ, আইএমএফ সেটি অনুমোদন করায় ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ২৬.৮ বিলিয়ন ডলার। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিট রিজার্ভ ছিল ১৬.৭৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল দিন শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৯.৮৯ বিলিয়ন ডলার।