প্রবাসীদের সুবিধার্থে সৌদি আরবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে চায় সরকার
সৌদি প্রবাসীরা যেন আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন— সেজন্য দেশটিতে বাংলাদেশের ব্যাংক শাখা বা অন্ততপক্ষে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করতে রিয়াদকে অনুরোধ জানানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল-জাদানের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সৌদি আরবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি)-এর বার্ষিক সভা চলাকালে দুই নেতার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সভাটি আগামীকাল (৩০ এপ্রিল) শেষ হবে।
সৌদি আরবে ব্যাংকিং সুবিধা বাড়লে উপকৃত হবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। একদিকে, তারা ব্যাংকিং সেবা পাবেন; অন্যদিকে, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোও সহজ হবে।
সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলেও সম্প্রতি এ দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকিং সেবা জোরদার করতে বাংলাদেশ এ প্রস্তাব দেবে বলে জানান সংশ্লিষ্টারা।
সৌদি আরবের সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ২৮ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বর্তমানে উপসাগরীয় দেশটিতে কর্মরত রয়েছেন, যা দেশটির প্রবাসী জনসংখ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৩৭৭ কোটি ডলার।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের মোট প্রবাসী আয়ের সাড়ে ২৬ শতাংশ এসেছিল শুধু সৌদি আরব থেকে। আর গত অর্থবছরে সৌদি আরবের অংশ কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশে।
জানা যায়, বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সৌদি আরবের ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থার দ্বারা আরোপিত চার্জ কমানোর জন্যও অনুরোধ করবে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা 'টকিং পয়েন্টস পেপার' থেকে আরও জানা যায়, দুই দেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে, প্রবাসীদের বীমা সুবিধার আওতায় আনতে বাংলাদেশি বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম চালুর বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের বীমা কোম্পানি যেন প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা সুবিধা দিতে পারে, সেজন্য সৌদি আরবের মনিটারি অথরিটিকে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ, অথবা বিকল্প উপায় হিসেবে সৌদি আরব কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মতো কোনো সৌদি সংস্থা ও বাংলাদেশের জীবন বীমা কর্পোরেশন মিলে যৌথ উদ্যোগও নিতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এনার্জি হাব তৈরি করতে অর্থমন্ত্রী সৌদি আরবের কাছে সহযোগীর প্রস্তাব দিতে পারে। হাবটি এ অঞ্চলে শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের একটি গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে।
একইসঙ্গে, বাংলাদেশ খাদ্য ও জ্বালানির মসৃণ সরবরাহ নিশ্চিতের অনুরোধ জানাবে। যাতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতায় ব্যাহত না হয়ে অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে।
এছাড়া অর্থমন্ত্রী সৌদি আরবকে দেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, চামড়া এবং পাটের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্যখাতে সহায়তা বাড়ানোর অনুরোধ জানাবেন, যাতে করে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম হয়।