‘পরিপক্বতার অভাব দেখে নিরাশ হয়েছি’: বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে যেসব প্রশ্ন শুনে ক্ষুব্ধ হলেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আজ শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রশ্ন শুনে নিরাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্ন শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ওপর প্রস্তাবিত কর কবে কার্যকর হবে তা নিয়ে।
এ প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মন্ত্রী বলেন, 'প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, 'সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা দরকার। সেটা (প্রথমে) করতে হবে। এটা এমন নয় যে আপনি বলবেন, আর আমি করে ফেলব, সেটা তো হয় না।'
সাংবাদিকেরা আরেকটি প্রশ্ন করেন, কয়েক বছর ধরে ১৫ শতাংশ বা তারও বেশি মূল্যস্ফীতির কারণে কি অর্থনীতি ছোট হয়ে যাচ্ছে, বাজেটের প্রকৃত আকার কি সংকুচিত হচ্ছে?
প্রথমে এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, 'সরকারের কট্টর সমালোচকরাও সম্ভবত বলবেন না যে অর্থনীতির আকার সংকুচিত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'যখন মন্দা হয়, তখন অর্থনীতির আকার সংকুচিত হয়। আর যখন প্রবৃদ্ধি হয়, তখন সেই প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কিছুটা মূল্যস্ফীতি হয়। আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ অর্থাৎ আমাদের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে।'
এ সময় অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, 'আমি এ বিষয়ে একটু কথা বলতে চাই। আপনারা (সাংবাদিকরা) যারা প্রশ্ন করছেন, তারা একটু পরিপক্ব প্রশ্ন করুন। ৭১ [টিভি] থেকে আরও পরিপক্ব প্রশ্ন আশা করেছিলাম। আমি সত্যিই নিরাশ হয়েছি।'
তিনি বলেন, 'এত সরলীকরণে কাজ হয় না। অর্থনীতি এভাবে চলে না। অর্থনীতি সংকুচিত হলে সবই করা হয়। আরও একটু পড়েটরে আসবেন। এইভাবে অতি সরলীকরণ করবেন না। কিছুটা পরিপক্কতার সাথে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।'
প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে কোনো কঠোর বার্তা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে আরেক সাংবাদিক মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, যারা অর্থ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছি-বিফোর দ্য ওয়ার্ড, বিফোর আওয়ার অডিয়েন্স, বিফোর আওয়ার পিপল। আমরা তো কোনো রাখঢাক করিনি। আপনারা (সাংবাদিকরা) কেন বারবার একই প্রশ্ন করছেন? আমি এটা বুঝতে পারছি না। এটা কি ধরনের প্রশ্ন?'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'কীভাবে প্রশ্ন করে আপনাদের (সাংবাদিকদের) তা শিখতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে। কারণ এটা কোনো সাংবাদিকতা না। কথায় ঘুরে ফিরে এক কথাই বলছেন… এগুলো (বাজেট বক্তব্যের বই হাতে নিয়ে) দেখেন, দেখে একটু শিখেন। তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে।'
অনুষ্ঠানে আরেক সাংবাদিক বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ব্যাংক ঋণ পান না।
এই প্রতিবেদক মন্ত্রীর কাছে এই সংকট থেকে বেসরকারি খাতের উত্তরণের উপায় কি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'ব্যবসায়ীদের সংগঠন কিন্তু এমন কোনো কথা বলেননি। দয়া করে এফবিসিসিআই এবং ঢাকা চেম্বারের বক্তব্য পড়ে আসবেন।'
বাজেটে অনেক প্রস্তাবই বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত ছাড়া উপস্থাপন করা হয়েছে অপর এক প্রতিবেদক এ অভিযোগ করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এটা একেবারেই অ-গুরুতর প্রশ্ন। এ প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার যোগ্য নয়।'
আরেকজন প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন, পণ্যের দাম কমাতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে কি না?
জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই মিলে কাজ করার চেষ্টা করছি এবং সাংবাদিকরাও তো আমাদের সাহায্য করছেন।'
এরপর তিনি বলেন, 'এটা কী ধরনের প্রশ্ন?'
অনুষ্ঠান শেষ করে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের দেখানো 'পরিপক্কতার অভাব' নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, '…বেশিরভাগ প্রশ্নই অপরিপক্ব। কারণ আমরা আপনাদেরকে যে বইটি (বাজেট বক্তব্যের বই) দিয়েছি, আপনারা পড়েননি, বইটি পড়ুন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি খুবই দুঃখিত হয়েছি। আপনারা যে পরিপক্কতার মাত্রা দেখিয়েছেন তাতে আমি খুবই নিরাশ। দু-একজন ভালো প্রশ্ন করেছেন। তবু আমি সবাইকে ধন্যবাদ দেবো। আপনারা অনেক আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু সেই আগ্রহ আরও পরিপক্ব হওয়া দরকার। আপনাদের (সাংবাদিকদের) লেখাপড়াটা একটু করতে হবে। দয়া করে এটা করবেন।'