তিন মাসে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব কমেছে ১,০১৮টি
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে জমানো আমানতের পরিমাণ কমছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক হিসাব কমেছে ১০১৮টি।
একই সময়ে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবধারীদের আমানত ১,৩১৬ কোটি টাকা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত সময় শেষে কোটি টাকার হিসাবধারীদের ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭,৪০,১৫০ কোটি টাকা— যা তিন মাস আগেও ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৭,৪১,৪৬৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে, চলতি বছরের মে মাসে এটি ৯.৮৯ শতাংশে উঠেছে। মূলত এ কারণেই মানুষ জমানো আমানতের টাকা ভেঙে খাচ্ছে।
এছাড়া, ডলারের সংকটের কারণে গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে আমদানি-রপ্তানিও কমছে। যার কারণে কোটি টাকার আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
তারা বলেন, একদিকে রপ্তানিকারকদের বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমছে। অন্যদিকে, ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। যার কারণে সামগ্রিকভাবে আমানতের পরিমাণ কমেছে।
অগ্রণী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "কোটি টাকার স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিলেও সে হিসাবগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠানিক আমানতই বেশি। এছাড়া এর মাধ্যমে প্রকৃত কোটিপতির হিসাব বোঝা কঠিন। কারণ অনেকে ব্যাংকে টাকা কম রাখলেও জমি, ফ্লাটের মাধ্যমে তাদের অ্যাসেট বৃদ্ধি করেন।"
তিনি বলেন, "কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট হোল্ডার কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকছি।"
"এছাড়া, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে অনেক ব্যাংকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। যার কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণের জন্য অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে এর প্রভাবে তাদের অমানত কমে যাচ্ছে," যোগ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২৪ সালের মার্চ শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৫,৮৯০ টি— যা তিনমাস আগে ছিল ১,১৬,৯০৮ টি।
চলতি বছরের এপ্রিলে অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের ওপর প্রায় ১৩ শতাংশের কাছাকাছি সুদ অফার করেছে— যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, উচ্চ সুদ হারেও গ্রাহকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে দাড়িয়েছে ৮.৬৩ শতাংশ— যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, কোটি টাকার হিসাবধারীদের মধ্যে ১ থেকে ৫ কোটি টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯২,৫১৬টি। এসব অ্যাকাউন্টে ১.৯৪ লাখ কোটি টাকা জমা রয়েছে— যা দেশের ব্যাংকখাতের মোট আমানতের ১১.১১ শতাংশ।
এছাড়া, ৫০ কোটি টাকা ও তার বেশি জমা আছে, এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১,৮১২টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট আমানতের পরিমাণ ২.৫ লাখ কোটি টাকা— যা দেশের মোট আমানতের ১৫.৪৬ শতাংশ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "কোটিপতি অ্যাকাউন্টের অধিকাংশই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন করণেই আমনত কমতে পারে, আবার বাড়তে পারে।"
"মূল্যস্ফীতির কারণে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট কমলেও এর সংখ্যা অত বেশি না। এর প্রভাবে ব্যক্তি পর্যায়ের অ্যাকাউন্টগুলোতে আমানত কিছুটা কমতে পারে," ব০লেন তিনি।
চলতি ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশে মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ। এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.৪৯ লাখ কোটি টাকা।