বিদেশে টিউশন ফি ও ব্যবসা উন্নয়নে অর্থ পাঠাতে আর উৎসে কর দিতে হবে না
আগামী ২০২৪-৩৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং কিছু ব্যবসায়ীর জন্য সুখবর আছে। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে বিদেশে টিউশন ফি, ব্যবসায়িক প্রচারের ব্যয় এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসে কর দিতে হবে না।
এছাড়া বিদেশে পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য ফি পরিশোধ, লিয়াজোঁ অফিসের খরচ পাঠানো, কোনো কর্তৃপক্ষকে অর্থ পরিশোধ, পণ্য উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণ খরচ এবং নিরাপত্তা জামানত পাঠানোর ক্ষেত্রেও উৎসে কর লাগবে না।
কর খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, এ উদ্যোগের ফলে বহির্মুখী (আউটওয়ার্ড) রেমিট্যান্স কার্যক্রম ঝঞ্ঝাটমুক্ত হবে। করের বোঝাও কমে আসবে। বাজেট প্রস্তাবটি পাশ হলে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দেশের বাইরে টাকা পাঠানো সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
এ উদ্যোগের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিএআর) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, টিউশন ফি পাঠানোর ক্ষেত্রে বর্তমানে উৎসে কর কর্তন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা বলতে গেলে কাটা হচ্ছে না। একইভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও উৎসে কর কাটার নিয়ম থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে কাটা হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে কাটা হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে এনবিআর থেকে সার্টিফিকেট নিতে হয়। সব মিলিয়ে পুরো কার্যক্রমটি ঝামেলাপূর্ণ।
অন্যদিকে বিদেশে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও উৎসে কর বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে দেশের উদ্যোক্তারা বলে আসছেন। এসব কারণেও বাজেটে আলোচ্য খাতগুলো থেকে উৎসে কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সাধারণত বিদেশে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধের সময়, অর্থাৎ বহির্মুখী রেমিট্যান্সে ৩০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হয়।
এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'সরকার পরোক্ষ কর কমাচ্ছে। এ ধরনের বহির্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর উৎসে কর বাতিল করলে খরচ কমবে এবং ট্যাক্স পেমেন্ট ডকুমেন্টেশন সহজ হবে।'
সুফল পাবে কারা?
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করতে যান। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এছাড়া চীন, মালয়েশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্তৃপক্ষকে নানা কাজে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশের সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য। এসব আন্তর্জাতিক পেশাজীবী সংগঠনের বার্ষিক চাঁদাসহ বিভিন্ন ধরনের চাঁদা পরিশোধ করতে অর্থ পাঠাতে হয় বিদেশে।
এর বাইরে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের বিদেশে লিয়াজোঁ অফিস আছে। এসব লিয়াজোঁ অফিসের পরিচালন খরচ পাঠাতে হয়। পাশাপাশি বিদেশে পণ্য উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণ এবং নিরাপত্তা জামানতের অর্থ পাঠান ব্যবসায়ীরা।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব ক্ষেত্রে উৎসে কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব পাশ হলে এসব ক্ষেত্রে উৎসে কর দিতে হবে না।