মে মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০.৩৫%
বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের মে মাসে আগের মাসের তুলনায় ০.৪৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ১০.৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
কোরবানি ঈদের কারণে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এপ্রিলে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি ৯.৯০ শতাংশ, যা তার আগের পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাপ্তাহিক নির্বাচিত অর্থনৈতিক সূচক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের (জানুয়ারি-জুন) ছয় মাসের বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল। তবে মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেসরকারি খাতে বেশি ঋণ গিয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রোজার ঈদ ও কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্যের আমদানি বাড়ায় বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।'
তিনি বলেন, 'সামনের দিনগুলোতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে কারণ দেশের অর্থনীতি ও বিশ্ব বাজারে মন্থর গতির কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসার সম্প্রসারণ কম করছে। কনটাকশনারি মুদ্রানীতির কারণে বর্তমানে ঋণের সুদ ১৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক রয়েছেন।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলমান বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মধ্যেই বাংলাদেশে ২৩ মাসে সর্বোচ্চ লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা হয়েছে যার মূল্য ছিল ৬.৮৩ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০২২ সালের জুন মাসে সর্বোচ্চ এলসি খোলার রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ৭.০২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তারপর থেকেই ডলারের বিনিময় হার ও অভ্যন্তরীণ মুদ্রা টাকার দর ওঠানামা করার কারণে এলসি খোলার প্রবণতা কমে আসে।
সরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি হেড টিবিএসকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি এলসি মার্জিন আরোপ করায় গত দুই বছরে আমদানি ব্যাপক কমেছে। এখন প্রতিমাসে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি এলসি খোলা হচ্ছে। যার কারণে গত দেড় বছর ধরেই বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।'
তিনি বলেন, 'দেশের আমদানিকারকরা ২০২১-২২ অর্থবছরে মাসে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের ইম্পোর্ট করেছে। সেই সময়ে আমাদের বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এখন হঠাৎ হঠাৎ বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়ে, আবার কমে। কারণ দুই ঈদের জন্য কিছুটা ইম্পোর্ট বেড়েছিল।'
তিনি আরো বলেন, 'এখন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা এক্সপান করতে খুবই সতর্ক কারণ আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের বিদেশি অর্ডার প্রায় ৩০ শতাংশের মতো কমে গেছে। এছাড়া ঋণের সুদের হার মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদের হার প্রায় ১৫ শতাংশের কাছাকাছি।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪ অর্থবছরে প্রথম নয়মাসে (জুলাই-মার্চ) এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট (নিষ্পত্তি) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১.৮৭ শতাংশ ও ১২.৫৯ শতাংশ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয়মাসে এলসি সেটেলমেন্ট হয়েছে হয়েছে ৪৯.৩৭ বিলিয়ণ ডলার যেখানে ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম নয়মাসে এলসি সেটেলমেন্ট হয়েছিল ৫৬.৪৪ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরে নয়মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি'র এলসি ও সেটেলমেন্ট ২৪.৬৮ শতাংশ কমে দাড়িয়েছে ২.১২ বিলিয়ণ ডলার। এছাড়া শিল্প কাঁচামাল আমদানি সেটেলমেন্ট ২১.৮৭ শতাংশ কমে দাড়িয়েছে ১.৬২ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, 2023 সালের জানুয়ারিতে ব্যক্তিগত ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৬২ শতাংশ। তারপর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়ে অক্টোবরে কিছুটা বেড়ে ১০.০৯ শতাংশ হয়ে নভেম্বরে আবারও হ্রাস পেয়েছে। তবে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলমান মুদ্রানীতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্ববর্তী ১১ শতাংশ থেকে জুনের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ কমানো সহ সকল অর্থ সরবরাহ লক্ষ্যমাত্রা নিম্নমুখী করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বরের জন্য ইন্টারেস্ট রেট বেইজড নীতি ঘোষণা করবে। এবারের মুদ্রানীতিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক মুল্যস্ফিতিকে লক্ষ্য করে মানি সাপ্লাই (অর্থ সরবরাহ) কমাতে চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল, জুনের মধ্যে মুল্যস্ফিতি ৭.৫ শতাংশ রাখা। কিন্তু এটা হয়নি। অইএমএফ এর আইএমএফ স্টাফ কান্ট্রি রিপোর্ট বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে সংকোচনমূলক ধারা অব্যাহত রাখবে। একইসঙ্গে পলিসি রেট ৮.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।'
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জুন ২০২৩ এবং মে ২০২৪ পর্যন্ত ১২ মাসের গড় মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৭৩ শতাংশ— যা বিদায়ী অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৭.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
সরকার ২০২৫ অর্থবছরের কনজ্যুমার প্রাইজ ইন্ডেক্স (ভোক্তা মূল্য সূচক-সিপিআই) ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার লক্ষ্য নিয়েছে।