২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬ বিলিয়ন ডলার
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, রপ্তানি কমার পরও আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলার কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তবে মে মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার। তারপরও বাণিজ্য ভারসাম্যের (ব্যালান্স অভ ট্রেড) ওপর চাপ কিছুটা কমেছে; কারণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.৬ শতাংশ কমেছে।
গত কয়েক বছর ধরে ভুলভাবে রপ্তানি বেশি হওয়ার হিসাব দেখানো হচ্ছিল। কয়েকদিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সেই হিসাব সংশোধন করার পর অবশেষে রপ্তানি তথ্যের গরমিলের রহস্য সমাধান হয়েছে।
হিসাব সংশোধন করার ফলে জুলাই-মার্চ সময়কালে রপ্তানি কমে গেছে ১০ বিলিয়ন ডলার। ফলে এতদিন ইতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রূপ নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রিজার্ভের অবস্থা স্বস্তিজনক না থাকায় কিছুটা কম ঘাটতিও অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের আমদানি কমে যাচ্ছে, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। মূলত ব্যালান্স অভ পেমেন্টের ওপর চাপ কমানোর জন্য আমদানি কমানো হয়েছে। মার্চেন্ডাইজ ও সার্ভিস এক্সপোর্টেও (সেবা রপ্তানি) ধস নেমেছে। ফলে মে পর্যন্ত সময়ের ট্রেড ব্যালান্সের ঘাটতি বাড়ছে।'
চলমান ডলার সংকট আমদানি কমার একটি বড় কারণ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়ার কারণে হয়তো সংকট কিছুটা কমেছে।
'তবে সার্বিক পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। আমদানি কমিয়ে ডলার সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা এখনও চলছে,' বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫.৯৮ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময় শেষে এই ঘাটতি ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল।
রেমিট্যান্সে ১০.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও রপ্তানি কমে যাওয়ায় কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি কিছুটা বেড়েছে। মূলত বাণিজ্য ঘাটতি বেশি থাকায় রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দিয়েও কারেন্ট অ্যাকাউন্টকে উদ্বৃত্ত করা যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মে মাস শেষে ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের উদ্বৃত্ত এপ্রিলের তুলনায় ২২৬ মিলিয়ন ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ২.০৮ বিলিয়ন ডলারে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলের ব্যালান্স অভ পেমেন্ট স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ২.২ বিলিয়ন ডলার বিলিয়ন উদ্বৃত্ত ছিল। এক মাস আগে এই ঘাটতি ছিল ৯.২৫ বিলিয়ন ডলার। দুই বছর ঋণাত্মক থাকার পর ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট।
গত দুই বছর দেশের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেতিবাচক ছিল। যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরাসরি রিজার্ভের অর্থ দিয়ে বিদেশি পেমেন্ট করতে হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত ব্যালান্স অভ পেমেন্ট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫.৮৮ বিলিয়ন ডলার।
এই ঘাটতি রিজার্ভ ক্ষয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ৩০ জুন গ্রস রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার।
জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমাদের সার্বিক ঘাটতি মে মাসে কিছুটা বাড়লেও জুনে কমে আসার কথা। কারণ, জুনে আমরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে ঋণসহ বেশকিছু সহায়তা পেয়েছি। তাই জুন মাসে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্তি বাড়বে।'
গ্রস প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ার তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'যে এফডিআই আসছে বলে দেখছি, এটা মূলত পুনঃবিনিয়োগের আয়, এখানে নতুন এফডিআই কম। এছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে এখানে খুব দ্রুত উন্নতির সুযোগও কম। একইসঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক নীতি আরবিট্রারারি; এটিও এফডিআই কমার একটি কারণ।'
ব্যালান্স অভ পেমেন্টে উন্নতি করার আগে আমাদের অর্থনীতিকে পুরোপুরি সচল করতে হবে উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের প্রকৃত ও ভার্চুয়াল অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ইন্টারনেট আগের মতো চালু করে দিয়ে এটাকে সবার আগে ঠিক করতে হবে। অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে অবস্থা স্বাভাবিক করতে হবে।'