জুন প্রান্তিকে টেকসই অর্থায়নে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৮,১০৩ কোটি টাকা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে টেকসই অর্থায়নে (সাসটেইনেবল ফিন্যান্স) নতুন পণ্যের সংযোজনের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ ৩২ শতাংশ বা ২৮,১০৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
এপ্রিল-জুনে ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) টেকসই অর্থায়নে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা আগের মার্চ প্রান্তিকের ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে সবুজ অর্থায়নে (গ্রিন ফিন্যান্স) ঋণ বিতরণও ৭৩২ কোটি টাকা বেড়ে ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
টেকসই অর্থায়ন বলতে এমন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা বোঝায়, যা বাহ্যিক কার্বন নিঃসরণ এবং অভ্যন্তরীণ কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে সহায়তা করে।
ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে প্রধান খাতগুলোতে অর্থায়ন করে, তার মধ্যে রয়েছে ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ এবং বস্ত্র শিল্প– যা উল্লেখযোগ্যভাবে কার্বন নিঃসরণে অবদান রাখে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন বিভাগের পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, "আমরা টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন পণ্য যুক্ত করেছি, যার ফলে এই খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে।"
তিনি জানান, এর আগে ব্যাংকগুলো সবুজ ও টেকসই খাতের ১১টি সেক্টরে ৬৮টি পণ্যে ঋণ বিতরণ করত। এখন আরও তিনটি খাত– ব্লু ইকোনমি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং বিবিধ খাত যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে পণ্যের সংখ্যা বেড়ে ৯৪টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই খাতে ২.০৫ লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা ঐ সময়ে এ খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ; যদিও এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ শতাংশ।
২০২৩ সালে টেকসই অর্থায়ন ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের ১৭.২৩ শতাংশ ছিল, যা আগের বছর ছিল ১১.৫৯ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো সবুজ অর্থায়নে ১৫ হাজার ২১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট ঋণের ১৪.৬৭ শতাংশ; যদিও লক্ষ্য ছিল ৫ শতাংশ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে জানান, টেকসই খাতে বিনিয়োগ প্রধানত শিল্পখাতে করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বছর নতুন খাতগুলো যুক্ত করায় এসব খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ব্যাংকগুলো এসব ঋণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও এখন ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ দিচ্ছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক। যেসব খাতে ঋণ দিলে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেসব খাতেই ঋণ দিচ্ছে।"
চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে ২৮টি ব্যাংক এবং ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ঋণ বিতরণের সঙ্গে সম্পর্কিত টেকসই অর্থায়নের জন্য ২০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। আগের মার্চ প্রান্তিকে এই সংখ্যা ছিল ২৬টি ব্যাংক এবং ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিক নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করে পুরো পরিস্থিতি উন্নীত করতে কাজ করছে। সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া পুনঃঅর্থায়ন সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।"
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, "এই উদ্যোগগুলোর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টেকসই অর্থায়নের প্রবণতায় ইতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক-এর টেকসই অর্থায়ন বিভাগ এই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শক্তিশালী, কার্যকর এবং সংগতিপূর্ণ প্রচেষ্টার প্রত্যাশা রাখে।"