খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের
আগামী রমজানে খেজুরের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
কমিশন গতকাল (১৪ নভেম্বর) তাদের সুপারিশসহ প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে খেজুর আমদানিতে আগাম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ, আগাম কর ৫ শতাংশ পুরোপুরি বাতিল এবং আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।
বর্তমানে খেজুর আমদানিতে মোট শুল্কের পরিমাণ ৭৩.৬০ শতাংশ। অতিরিক্ত আমদানি শুল্কের কারণে আমদানি হয়ে আসা খেজুর চড়া দামে কিনতে হয় ভোক্তাকে।
প্রতি বছর প্রায় ১ থেকে ১.১০ লাখ টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে দেশে। এর মধ্যে ৫০-৬০ হাজার টন খেজুর ব্যবহার হয় শুধু রমজানেই।
এ কারণে প্রতি বছরই রমজানের আগে খেজুরের আমদানি যাতে সহজ ও নিরবিচ্ছিন্ন হয়, সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, শুল্ক স্টেশন কর্তৃক নির্বাহী আদেশে খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কায়ন মূল্য ত্রুটিপূর্ণ। এজন্য যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকৃত বিনিময়মূল্যকে ভিত্তি ধরে শুল্কায়ন করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
বর্তমানে আজওয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুম ও রেফার কনটেইনারে আমদানিকৃত সব খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য ধরা হয় কেজিতে ৪ ডলার।
কোনো ব্যবসায়ী যদি এই খেজুর ২ ডলারেও কেনেন, তারপরও তাকে ৪ ডলার শুল্কায়ন মূল্য ধরেই শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরেই এটাকে প্রকৃত মূল্যে শুল্কায়ন করার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন সরকারের কাছে। কিন্তু সেটি করা হয়নি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে খেজুর আমদানি হয়েছিল ৮৬ হাজার ৫৮১ টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৮০ হাজার ৯১০ টন। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতি কেজি খেজুরের গড় আমদানিমূল্য ছিল যথাক্রমে ৩৩৬ টাকা ও ৪৯৭ টাকা (শুল্ক-কর ছাড়া)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খেজুর আমদানি হয়েছে মাত্র ২৮৯ টন, প্রতি কেজি খেজুরের গড় মূল্য পড়েছে ৪৩৩ টাকা।
বাংলাদেশে মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিশিয়া, মিশর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে বেশিরভাগ খেজুর আমদানি হয়।
শুল্কায়ন মূল্যে সংস্কার চান ব্যবসায়ীরা
গত ৬ নভেম্বর ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খানের সভাপতিত্বে খেজুর আমদানিকারকদের নিয়ে একটি সভা হয়।
ওই সভায় বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুডস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কাস্টমসের ফিক্সড শুল্কায়ন মূল্যে ও 'অযৌক্তিক' কিছু শুল্ক-করের কারণে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়েও অনেক বেশি দাম দিয়ে খেজুর বিক্রি করতে হচ্ছে।
এতে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়ছে। এই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে যৌক্তিক শুল্কায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম।
একই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও খেজুর আমদানিকারক নুরুদ্দীন বলেন, ব্যাংকগুলো শতভাগ মার্জিন ছাড়া ঋণপত্র (এলসি) না খোলায় খেজুর আমদানির ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
তাই খেজুরকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা না করে শতভাগ এলসি মার্জিনের শর্ত থেকে বের করে দেওয়া উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি। কারণ রমজানে সারা দেশের মানুষ খেজুর খায়।