রাজস্ব ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে, ৫ মাসে ঘাটতি ৪২,০০০ কোটি টাকা
রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে সরকার। সর্বশেষ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি আগের মাসের চেয়ে আরও ১০,০০০ কোটি টাকা বেড়ে ৪২,০০০ কোটি টাকা হয়েছে।
অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না ফেরা এবং বেশকিছু নিত্য পণ্য আমদানিতে ট্যাক্স ছাড় দেওয়ায় সরকারের রাজস্ব কমে গেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সেইসঙ্গে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে যাওয়া কিংবা বন্ধ হওয়াও রাজস্ব কমার পেছনে কারণ হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেবল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় নয়, আলোচ্য সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়ও রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ— যার পরিমাণ ৩,৪০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে নভেম্বরেই কমেছে প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা।
অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের মধ্যে তিন মাসেই গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে।
এনবিআর সূত্র আরও জানায়, গত অক্টোবর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা— যা নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ৪২,২৩০ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তিত এনবিআরও। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) মাঠ পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উপায় নিয়ে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমিশনার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মানুষকে হয়রানি না করে ন্যায্য রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং যাতে কোনো ধরনের ভুয়া রাজস্ব না দেখানো হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন।"
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত নভেম্বর পর্যন্ত ১.৬৯ লাখ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১.২৭ লাখ কোটি টাকা।
এছাড়া ৩৬,৯০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি। গত বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল প্রায় ২৮,০০০ কোটি টাকা।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে কিছুটা গতি মন্থরতা ছাড়াও আরও কিছু কারণকে দায়ী করছেন এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার কমিশনারেটে সবমিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৪ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।"
"জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পেট্রোলিয়াম ইমপোর্ট কম হয়েছ ৮ লাখ মেট্রিক টন, আবার ট্যাক্স কমানোর কারণে প্রতি লিটারে রাজস্ব কমেছে ০.৭৯ টাকা। যার কারণে এ খাত থেকেই রাজস্ব কমেছে ২১৯ কোটি টাকা।"
"ভোজ্যতেলে ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার কারণে মাসে কম আদায় হচ্ছে ৭০ কোটি টাকা করে। এস আলমের ব্যবসা থেকে মাসে গড়ে ২০ কোটি টাকা আদায় হতো, সেটিও এখন বন্ধ। এসব টাকা যোগ হলে আমাদের গতমাসের চেয়েও অনেক বেশি গ্রোথ হতো," বলেন এই কর্মকর্তা।
অবশ্য তিনি আরও বলেন, "ডিসেম্বরে আমদানি বাড়ছে। ফলে আশা করছি, আগামী মাসগুলোতে রাজস্ব কিছুটা বাড়বে।"
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, "আগামী মাসগুলোতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণও বাড়তে থাকবে। ফলে আদায় বাড়লেও গ্যাপ কমানো যাবে না, বরং বাড়তে পারে।"
তিনি বলেন, "লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ের এই গ্যাপ বছর শেষে ৮০,০০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।"
সাবেক এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, "সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কমে গেছে। এ খাত থেকে যে ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় হতো, তা হচ্ছে না। রাজস্ব কমার এটিও একটি কারণ।"
"এসব স্বত্ত্বেও যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তা একেবারে খারাপ নয়," বলেন তিনি।