সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করল সরকার
প্রথমবারের মতো মার্কেট রেট বা বাজারে প্রচলিত সুদ হারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৫টি জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার। এতে প্রত্যেকটি সঞ্চয়পত্রের সুদহার কিছুটা বেড়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক প্রজ্ঞাপনে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন সুদহার ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ, ১ জানুয়ারি বা তারপর থেকে যেসব গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র কার্যকর হয়েছে, তারা নতুন বা বাড়তি সুদহার পাবেন।
জানুয়ারী থেকে জুন এই ছয় মাস মেয়াদে নতুন সুদহার কার্যকর হবে। এছড়া, এখন থেকে ৬ মাস পরপর বাজারের সাথে সমন্বয় করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এতদিন যাবত তিন ধাপে বিনিয়োগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ ছিল। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা পেতেন সবচেয়ে বেশি সুদ। এরপর ১৫ লাখ এক টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে এক ধরনের সুদহার এবং ৩০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিনিয়োগে আরেক ধরনের সুদহার ছিল। বিষয়টি এমন ছিল যে, যার যত বেশি বিনিয়োগ, তার জন্য সুদহার তত কম।
নতুন প্রজ্ঞাপনে তিন ধাপের পরিবর্তে নতুন দুই ধাপ তৈরি করা হয়েছে। একটি ধাপ ৭.৫০ লাখ টাকা; আরেকটি ধাপ ৭.৫০ লাখ টাকার বেশি থেকে শুরু। এছাড়া, আগের মত বিনিয়োগের মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়নের ক্ষেত্রে বছরভিত্তিক হারে মুনাফা পাবেন গ্রাহক।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিকে সমতা প্রদানের লক্ষ্যে এই ধাপ ও বিনিয়োগের পরিমাণে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তবে এতে সরকার বা রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়বে।
সংশোধিত সুদহার
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অধীন চারটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে— পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রে এখন সর্বোচ্চ সুদহার ১২.৪০ শতাংশ— যা আগে ছিল ১১.২৮ শতাংশ।
এছাড়া, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ১২.৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এই সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১.০৪ শতাংশ।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৫৫ শতাংশ— আগে ছিল ১১.৭৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় বা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হওয়া পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৫০ শতাংশ— যা আগে ছিল ১১.৫২ শতাংশ।
এর বাইরে জনসাধারণের সঞ্চয়ের আরেকটি ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি হচ্ছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদী হিসাবে টাকা জমা রাখা। এই মেয়াদী হিসাবের সুদের হারও পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে যারা ডাকঘরে সঞ্চয় করবেন তারা ১২.৩০ শতাংশ হারে সুদ পাবেন— যা আগে ছিলো ১১.২৮ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ বছর ও ২ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের সাথে সঙ্গতি রেখে উল্লিখিত ৫টি সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার বছরে দুইবার পুনঃনির্ধারণ করা হবে। বিনিয়োগকারী ইস্যুকালীন সময়ে বিদ্যমান মুনাফার হার, বিনিয়োগকালের পূর্ণ মেয়াদের জন্য প্রাপ্য হবেন; অর্থাৎ যে মেয়াদের জন্য তা ইস্যু করা হয়েছিল, সে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত একই হারে মুনাফা প্রাপ্য হবেন।
উপকৃত হবেন প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা
মুনাফার হার পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের প্রান্তিক বিনিয়োগকারীগণ উপকৃত হবেন এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে নারী, অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী, পেনশনার বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিনিয়োগের মাধ্যমে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে— যা সঞ্চয় স্কিম সংক্রান্ত এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে অধিকতর কার্যকর হবে মর্মেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে বলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।