সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত: আমদানি বাড়ছে ভারত থেকে
সাম্প্রতিক সময়ে দূরবর্তী দেশগুলো থেকে সমুদ্রপথে আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি বেড়েছে। ফলে বর্তমানে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৮১ শতাংশ, যার পরিমাণ ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, ভারতের অর্থবছর শুরু হয় এপ্রিলে।
দুই বছর আগেও বাংলাদেশ ছিলো ভারতের নবম সর্বোচ্চ রপ্তানি গন্তব্য। সাম্প্রতিক আমদানি বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন ভারতের চতূর্থ রপ্তানি গন্তব্যের তালিকায় উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হারে। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশেরও বেশি হারে।
রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে পোশাক খাত থেকে। এই খাতের মূল কাঁচামাল কটন ও ইয়ার্নের ৯৮ শতাংশই আমদানিনির্ভর। এর মূল উৎস চীন, ভারত, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। কিন্তু চলতি বছর জাহাজে পন্য আমদানিতে বড় ধরণের সংকট তৈরি হওয়া, কন্টেইনার ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত বাদে ওইসব দেশ থেকে আমদানি কঠিন হয়ে গেছে।
অপেক্ষাকৃত সহজ যোগাযোগের সুযোগ থাকায় বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে আমদানিতে মনযোগ বাড়ান বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সম্প্রতি চীনের বিদ্যুত সরবরাহে বিভ্রাট। এই কারনে সেখানকার উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বিকল্প পথে আমদানিতে গুরুত্ব দিতে থাকেন।
অন্যান্য দেশ থেকে যখন আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে, তখন ভারতে সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিদ্যমান বাধা দূর করতে উভয় দেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী আলোচনা চলছে।
ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে ভারত সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি বাজারের তালিকায় এর পর রয়েছে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, বাংলাদেশ ও হংকং। বাংলাদেশে ভারত থেকে আমদানি হওয়া শীর্ষ পাঁচ পন্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, সিরিয়াল, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি, যানবাহন যন্ত্রাংশ, মেশিনারি এবং মেকানিকাল অ্যাপলায়েন্সেস।
টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তা রাইসিং গ্রুপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরবরাহ চেইনে সমস্যা হওয়ায় পশ্চিম আফ্রিকা ও ব্রাজিলকে বাদ দিয়ে ভারত থেকে কটন আমদানি বাড়িয়েছি আমরা। চলতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে ভারত থেকে কটন ও ইয়ার্ন আমদানির পরিমাণ ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছি। দর বিবেচনায় এই গ্রোথ ৫০ শতাংশ।"
তিনি বলেন, কেবল কটন বা ইয়ার্ন নয়, ডাইস কেমিক্যালের মূল রপ্তানির দেশ চীন হলেও গত কয়েক মাসে ভারত থেকে আমদানি বেড়েছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর অতিরিক্ত পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)মনসুর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশের আমদানি বাড়ার মূল কারন শিল্পের কাঁচামাল। লজিস্টিক সমস্যা হওয়ায় অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশের কাঁচামাল আমদানি ব্যহত হয়। এদিকে ভৌগলিক কারনে ভারত থেকে আমদানি সুবিধাজনক ছিলো। কেননা এখান থেকে সড়ক পথেও পন্য আনা সুবিধাজনক।"
বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ টি এম আজিজুল আকিল ডেভিড মূলত চীন থেকেই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করেন। টিবিএসকে তিনি বলেন, "চীন থেকে মেশিনারি আমদানির জন্য গত মার্চে এলসি ওপেন করে, যা আগস্টে শিপমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শিপিং এবং কন্টেইনার ক্রাইসিস এবং শিডিউল সমস্যার কারনে সেই পন্য চট্টগ্রাম আসতে প্রায় ৯ মাস দেরি হলো। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এলসি খোলার তিন মাসের মধ্যে পন্য হাতে আসার কথা।"
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোভিডের নতুন রূপ অমিক্রনের ভ্যারিয়েন্ট চীনের কয়েকটি প্রভিন্সে বাড়তে থাকায় কিছু এলাকায় ফের লকডাউন শুরু হয়েছে। এই সমস্যা চলতে থাকলে চীন থেকে আমদানি ফের ব্যহত হতে পারে বলেও শঙ্কার কথা জানান এ টি এম আজিজুল আকিল ডেভিড।