পূর্বাচলে জমজমাট হবে এবারের বাণিজ্য মেলা, আশা আয়োজকদের
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কিছুটা দূর হলেও নতুন এলাকা হিসেবে পূর্বাচলে এবারের বাণিজ্য মেলা জমজমাট হবে। কারণ এটি ঢাকারই সম্প্রসারিত একটি এলাকা। ইতিমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
শুক্রবার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এবারই প্রথম পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। আজ শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "৫১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এই মেলা তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছাতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর বিকল্প নেই।"
তিনি বলেন, "এই ধরনের বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা সম্ভব। আমরা বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চেষ্টা করবো যাতে আমাদের পণ্যের পরিচিতি আরও বাড়ানো যায়। আমাদের আশা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হবে বাংলাদেশ- এই সব মিলিয়েই আমরা পরিকল্পনা করছি আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর।"
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "রাস্তা উন্নয়নের কাজ ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এছাড়া ভবিষ্যতে মেলায় অংশগ্রহণকারীদের আবাসনেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।"
টিপু মুনশি বলেন, পূর্বাচলে এক মাস আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে। বাকি ১১ মাস বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তাদের পণ্যের প্রসার-প্রচারে এখানে মেলার আয়োজন করতে পারবে। বছরের অন্য সময়ে এখানে যেন ছোট ছোট মেলার আয়োজন করা হয় সেজন্যে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান তিনি।
দেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও প্রসারে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, "রপ্তানি বাড়ানোর অন্যতম কৌশল হচ্ছে পণ্য উন্নয়ন ও তার বাজার সৃষ্টি করা। আর এই বাজার সৃষ্টি করার প্রধান কৌশল হলো বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা। নবনির্মিত এই বিবিসিএফইসি বাণিজ্য মেলা আয়োজনের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়।"
মূল ঢাকার বাইরে মেলা কতটা জমে উঠবে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ টিবিএসকে বলেন, "ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী এসব এলাকার লোকজন বাণিজ্য মেলায় আসবে। এখানে খোলামেলা জায়গা বেশি তাই মানুষের ব্যাপক সমাগম হবে। তবে প্রথমবারের আয়োজনে কিছুটা ভুলত্রুটি থাকতে পারে। ধীরে ধীরে তা বড় ধরনের মেলায় পরিণত হবে।"
এবারের মেলায় মূল ভবনের ভেতরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করবে। দুটি মা ও শিশু কেন্দ্র থাকবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সিসিটিভিসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেলায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থাকবে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ স্টল, প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ হয় নি। অনেকেই তাদের স্টলের অবকাঠামো তৈরী করছে।
মেলার মূল ভবনের ভেতরে প্যাভিলিয়ন নিয়েছে ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটির প্রডাক্ট ম্যানেজার মো. শুভ টিবিএসকে বলেন, "আজ (শুক্রবার) রাতেই আমাদের প্যাভিলিয়ন সাজানোর সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।"
মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীও টিবিএসকে বলেন, "আজ (শুক্রবার) রাতের মধ্যেই অনেক কাজ শেষ হয়ে যাবে। অনেকে মালামাল নিয়েও এসেছেন।"
১ জানুয়ারি থেকে নতুন ঠিকানা রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা ২০২২। করোনার কারণে ২০২১ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবার করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় শুরু হচ্ছে এ মেলা।
১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এবারই পূর্বাচলে স্থায়ী ভেন্যুতে মেলা আয়োজন করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে মেলায় কমানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। দর্শনার্থীরা যেন খোলামেলা পরিবেশে হাঁটতে পারে সেই চিন্তা থেকেই খোলামেলা জায়গা বেশি রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে ৪৮৩টি ছোট-বড় স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল মেলায়। সেটা কমিয়ে এবার করা হয়েছে ২২৫টি। করোনার কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ কম। সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং তুরস্ক অংশ নিচ্ছে মেলায়।
এবারে বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড কোর্ট স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধা সহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুইটি হলে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাবরের ন্যায় এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় দ্বিতল গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে । যেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এছাড়াও হলের বাইরে ছয় একর জমিতে পার্কিং ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে ছুটির দিনে চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবার প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা।
এবারই প্রথম মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকছে ৩০টি বিআরটিসি বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে বাসগুলো।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্বার্থে মেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশেপাশে ২২০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এছাড়া ৩০০ এর অধিক পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রী।