এডিপি ৭.৮৭ শতাংশ কমানোর অনুমোদন দিল পরিকল্পনা কমিশন
বুধবার তাদের বর্ধিত সভায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করে তা ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বেশ কিছু বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকায় এই অনুমোদন দেয় পরিকল্পনা কমিশন।
চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন আগামী ২ মার্চ দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অনুমোদন দেবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশোধিত বাজেটে সরকারি ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার তহবিল অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বাজেটে বৈদেশিক সাহায্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান তারা। সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি তহবিল মূল টাকা ৮৮ হাজার ২৪ কোটি থেকে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধিত এডিপি বরাদ্দ পেয়েছে ১ হাজার ৭৫৩টি প্রকল্প। এর মধ্যে ৩৭৮টি প্রকল্পের কাজ চলতি অর্থবছরে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রোগ্রামিং বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, "পরিকল্পনা কমিশন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প ভিত্তিক বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব, বাস্তবায়ন হার এবং অর্থায়নের যোগান পর্যালোচনা করে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ অনুমোদন করেছে।"
আগামী ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভিত্তিক বরাদ্দ
পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধিত এডিপিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বরাদ্দ সমান্য বাড়লেও কমেছে রেল মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের বরাদ্দ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বরাদ্দ ০.৮৯ শতাংশ বাড়িয়ে ২৮ হাজার ২৯২ কোটি টাকা করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমছে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে সেতু বিভাগের বরাদ্দ কমছে ৪২ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগের চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ কমছে ১০ শতাংশ।
এদিকে, শিক্ষা খাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও কমেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ
সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এডিপির ১৫ খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ কমছে স্বাস্থ্য খাতে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কৃষি, পরিবহন এবং যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষাসহ সব খাতেই বরাদ্দ কমছে সংশোধিত এডিপিতে । তবে উল্লেখযোগ্য হারে ১০ শতাংশের চেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি (১৪ শতাংশ), শিক্ষা খাতে (১০ শতাংশ)।
এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ কমছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যেসব খাতে গুরুত্ব দিয়ে অর্থ ব্যয় বাড়ানোর দরকার ছিল সেসব খাতে অর্থ ব্যয় বাড়ছে না।"
"অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে গুণগতভাবে অর্থব্যয়ের বাড়ানো দরকার ছিল। কিন্ত তা বাড়েনি," বলেন তিনি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সক্ষমতা বাড়েনি বলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হয়, উল্লেখ করেন আহসান এইচ মনসুর।