রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত: একদিনেই অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার
ইউক্রেনে সংঘাত শুরু হতে না হতেই ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলে দাম বেড়েছে মণে (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) ৭০০ টাকা। আমদানি ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ইউক্রেনে সংঘাতের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকা দামে। যা গত বুধবারে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ টাকা দামে। সেই হিসেবে মাত্র একদিনেই পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৭০০ টাকা।
একইভাবে গত একদিনে মণে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাম অয়েলের দাম। একদিন আগে বাজারে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ টাকা দামে। যা বর্তমানে ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মণে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গতকাল ৬ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাম সুপার অয়েল। গত বুধবার বাজারে একই পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ টাকা দামে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক-দেড় বছর ধরেই ভোজ্যতেলের দাম উর্ধ্বমুখী। এরমধ্যে হঠাৎ করে গত একদিনেই পণ্যটির দাম মণে আরো ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে এই পর্যন্ত পণ্যটির দাম ২৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু ভোজ্যতেল নয়, ইউক্রেনে সংঘাতের খবর বাজারে পৌঁছতেই বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
গত এক দিনেই প্রতিমণ গমের দাম মণে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একদিন আগেই বাজারে প্রতিমণ গম বিক্রি হয়েছে ১০৬০ টাকা দামে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে বৃহষ্পতিবার পাইকারিতে গম বিক্রি হয়েছে ১১৬০ টাকায়।
বুধবারে ২ হাজার ৬৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া চিনি মণে ৪০ টাকা পর্যন্ত বৃহষ্পতিবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬৮০ টাকায়।
মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রতিমণ সাদা মটরের দাম বেড়েছ প্রায় ১৫০ টাকা। গত বুধবার প্রতিমণ সাদা মটর বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫৩০ টাকা দামে। বৃহষ্পতিবারে একই মানের সাদা মটর বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকায়।
একইভাবে মাত্র একদিনেই আমদানিকৃত মসুরের দাম মণে ১১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার বাজারে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত মসুর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২৮০ টাকা দরে। যা একদিন আগে বুধবারে ৩ হাজার ১৭০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে মেসার্স ইসমাইল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বুধবার পর্যন্ত বেশিরভাগ ভোগপণ্যের বাজার স্থির ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের খবরে বৃহষ্পতিবার সকাল থেকেই হু হু করে বেশিরভাগ পণ্যের দাম অস্থির হয়ে উঠে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরএম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন সংকটের কারণে পণ্যের দাম একদফা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে পণ্য পরিবহনে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির। এরমধ্যে ডলারের দাম বেড়েছে। এসবের সাথে এবার যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট। একদিনেই আর্ন্তজাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের বুকিং দর বেড়ে গেছে। এসবের কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে।
এই বিষয়ে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিভিন্ন কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম অস্থির। আসন্ন রমজানকে ঘিরে এই বাজার আরো অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো, ভর্তুকি দেওয়া, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি এবং ভোজ্যতেল আমদানি উন্মুক্ত করতে হব, যাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন আমদানি হয়েছে। গত বছর ২০২০-২১ সালের একই সময়ে সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩ টন।
গত বছর জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পাম অয়েল আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ২৮ হাজার ৭৩৩ মেট্রিক টন। এবছর আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৮ টন।
চলতি অর্থবছরের এই সময়ে মসুর আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫৮৬ টন। গত বছরের একই সময়ে মসুর আমদানির পরিমান ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৮৯৭ টন।
গত বছর ছোলা আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৩ মেট্রিক টন। এবছর আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন।
এবছর প্রথম সাত মাস চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ১৪ হাজার ২ টন। যা গত বছর ছিল ৩ লাখ ৫ হাজার ২ টন।