২০২৩ সালের মার্চ থেকে উৎপাদনে যেতে পারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল নামেও পরিচিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) চালু হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হবে এখানে।"
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল, লজিস্টিকসহ বিভিন্ন কোম্পানি এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান তিনি। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এরমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
"আমাদের পরিকল্পনা ১০০টি কোম্পানি থাকবে, বিনিয়োগ আসবে ১ বিলিয়ন ডলার," বলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন সংযোগ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি), পানি শোধনাগার নির্মাণের চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
এ অঞ্চলের অবকাঠামোগত কাজের জন্য বেজা ও সুমিতোমো করপোরেশন যৌথভাবে 'বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেড' কোম্পানি গঠন করেছিল।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এক হাজার একর জমিতে যৌথভাবে এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছে জাপান ও বাংলাদেশ সরকার।
ইতোমধ্যে ৬২০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বাকি ৩৮০ একর এ বছরের জুনের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে, জানান বেজার কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইতোমধ্যেই এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য জমি চেয়েছে সিঙ্গারসহ ১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। সিঙ্গার কারখানা তৈরির জন্য ১৩ হেক্টর জমি চেয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প
বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান সরকারের মধ্যেগভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) ভিত্তিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। এর অবকাঠামো উন্ননের লক্ষ্যে 'নারয়নগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প ২০১৯ সালের ৫ মার্চ মাসে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)।
প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৩ এর ৩০ জুন পর্যন্ত। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৫৮২ কোটি ১৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৫৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ২ হাজার ১২৭ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা খরচ করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিভূত অর্থিক আগ্রগতি ১৯ শতাংশ ও ভৌত অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। ইতোমধ্যে ভূমি উন্নয়ন কাজের ৭৪ শতাংশ ও সীমানা দেয়ালের ১৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
২০২৩ সালের মার্চে উৎপাদনে যাবে কিছু কোম্পানি
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ জাপানিদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
একে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক অংশীদারত্বের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। প্রকল্পটি সফল হলে জাপান-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে উল্লেখ করে এ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ অর্থনৈতিক অঞ্চল আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এখানে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ করতে আকর্ষণ করবেন তারা।
তিনি বলেন, এখান থেকে সহজেই পূর্ব এশিয়াতে ও আসিয়ান দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করা যাবে। এসব দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। অবকাঠামো আর সুযোগ-সুবিধা হবে গুণগত মানসম্পন্ন।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলি , মোটরসাইকেল, মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য ও যন্ত্রপাতি, কৃষিখাদ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে।
এরই মধ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপানের টয়োটা, মিতসুবিশি, সুমিতোমো, তাওয়াকি, সুজিত।
২০৩০ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বেজা। এ অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা সাময়িক কর মওকুফ, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত আমদানি, লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি, ভ্যাট-মুক্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে পাবেন।