শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েও যেকারণে চীনের বাজারে রপ্তানি বাড়ছে না
গত জুলাইয়ে নিজ বাজারে বাংলাদেশের ৯৭% পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা কার্যকর করে চীন। এতে উৎফুল্ল হয়েছিলেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা। কিন্তু এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে রপ্তানি আয়ে বড় ধরণের উলম্ফনের আশা করা হয়েছিল।
তবে শিগগিরই সে স্বপ্নের বুদবুদ উবেও যায়।
রপ্তানির তথ্য-উপাত্তগুলিতে দেখা যাচ্ছে, মহামারির পর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা কার্যকরের পাশাপাশি নতুন করে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি শুরুর পরও গত ৯ মাসে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তেমন বাড়েনি বরং পাঁচ বছর আগের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে। পূর্বের ওই সময়ে ৯৪৯ মিলিয়ন ডলারের উচ্চ অঙ্ক স্পর্শ করেছিল চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে চীনে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫৪৬ মিলিয়ন ডলার। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৯.৬৮% বেশি। আগের অর্থবছর চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৮০ মিলিয়ন ডলার।
একইসঙ্গে, দুই দেশের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি তীব্রভাবে বেড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনে ৯৪৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে, চীন থেকে আমদানির বিল ছিল ১০.৭ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে ২০২১ অর্থবছরে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬৮০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যখন আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৯৩ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশের মোট আমদানির প্রায় ২০% আসে চীন থেকে, যার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক এবং অন্যান্য শিল্প খাতের কাঁচামাল।
চীনের ব্যবসায়ীদের সাথে এক বৈঠকের পর বেইজিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, চীনের প্রধান ২০টি আমদানি পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশের কোন রপ্তানি পণ্য নেই।
রপ্তানির বৃদ্ধির পথে বড় একটি বাধা- চীনের উৎপাদকদের তুলনায় বাংলাদেশের উচ্চ মানের ও ব্রান্ডেড পণ্য না থাকা। এর প্রতিফলন চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, যেকারণে বাজার ধরতে পারছে না বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
এছাড়া, চীনের জিরো কোভিড নীতির কারণে মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের চীনে ভ্রমণ করতে না পারা, অনলাইন ব্যবসায় বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোর পিঁছিয়ে থাকা এবং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের আগ্রাসী বিপণন কৌশলের (অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং) অভাবকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উদযাপনের একটি বিষয়, যা এখন উদ্বেগে রূপ নিয়েছে তা হলো- উদার শুল্ক-মুক্ত সুবিধার পরও রপ্তানিতে ইতিবাচক ফল অর্জনের ব্যর্থতা।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৯৭% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় তৈরি পোশাকের সকল পণ্যসহ মোট ৮,২৫৬ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করে চীন, পরে চামড়াজাত পণ্যগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করে এটিকে ৯৮% করা হয়েছে।
এরপরও চীনে অনুল্লেখযোগ্য রপ্তানির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোনো একক দেশের ওপর পণ্য সরবরাহের নির্ভরশীলতা কমাতে অনেক দেশ চীন থেকে কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এতে চীনের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে, স্থানীয় উৎপাদকরা রপ্তানি বাজারের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি করছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতে নেতিবাচকভাবে প্রভাব যোগ করেছে।
তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।
টিবিএসের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান চীনের জিরো কোভিড পলিসি এবং বিদেশ থেকে ফেরার পর চীনা ব্যবসায়ীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পালনকে অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "জিরো কোভিড নীতির কারণে চীন বিদেশিদের ভিসা দিচ্ছিল না। একইসময়, বিদেশ থেকে ফিরে চীনা ব্যবসায়ীদের ২১ দিন দীর্ঘ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে সফরকারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেকটা কমে যায়। সেকারণে চীনের সার্বিক আমদানিও কমেছে।"
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হলে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে পুরোটাই হতাশার গৎবাঁধা সুর নয়।
চলতি অর্থবছরে চীন ছাড়া বাংলাদেশের ১৫টি বড় বৈদেশিক বাজারের সবকটিতেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক-মুক্ত সুবিধার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, রপ্তানি বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। প্রধান প্রধান ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।
প্রতিবেশী ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৫৯ শতাংশ।
যেসব রপ্তানি পণ্য চায় না চীন:
বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য ব্যবহার করে গত এক দশকে চীনের সাথে রপ্তানি চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এসময়ে ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ১ বিলিয়নে পৌঁছায়। তারপর থেকে খাড়া পতনের শিকার হয় বাংলাদেশের রপ্তানি, অবশ্য তা ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামান্য বেড়েছিল।
গত দুই অর্থবছর চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৭০০ মিলিয়ন ডলারও ছুঁতে পারেনি।
এই বাস্তবতায়, গত এপ্রিলে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে শুল্ক-মুক্ত সুবিধা থাকার পরও রপ্তানি না বাড়ার কারণগুলি উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দিতে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর প্রেক্ষিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, চীনের প্রধান আমদানি পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো রপ্তানি পণ্য নেই।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হতেই পারে, চীন যে সব পণ্য চাচ্ছে না বাংলাদেশ সেগুলোই বিক্রি করতে চাইছে।
তাহলে চীন আসলে কী চাইছে?
একই প্রতিবেদন অনুসারে, চীন বর্তমানে ২০টি পণ্যের সবচেয়ে বেশি চাহিদা, এগুলো হলো: ইলেকট্রনিক সার্কিট, অপরিশোধিত তেল, মোটর কার, ফোন সিস্টেম ডিভাইস, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, সয়াবিন, তামার তার, ডেটা প্রসেসিং মেশিন, সেমিকন্ডাক্টর, পরিশোধিত তামা, সৌর শক্তি ডায়োড, পলিমার, সৌন্দর্য পণ্য, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট, লো ভোল্টেজ সুইচ ইত্যাদি।
বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস জোর দিয়ে বলেছে যে, এসব ক্যাটাগরিতে পণ্যের অভাব বাংলাদেশের রপ্তানি আকাঙ্খাকে ক্ষুন্ন করেছে।
তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের সমস্যা:
সার্ক প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেডিং এগ্রিমেন্ট বা সাফটার আওতায় শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাওয়ার পর ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যতোটা সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ, তার ছিঁটেফোঁটাও মিলছে না শ্রমের বাড়তি মজুরির দেশ চীনে। অথচ দেশটির অভ্যন্তরীণ তৈরি পোশাকের বাজারের আকার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ভারতে বাংলাদেশের উভেন ও নিটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ ৫২৩ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে চীনে এ দু'টি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ১৭৩ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারের আকার ৭৫০ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে চীন অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলার। "শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর হওয়ার পর চীন থেকে প্রচুর রপ্তানি অর্ডার আসবে বলে আমরা আশা করেছিলাম, কিন্তু হতাশ হয়েছি।"
শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করার পরও চীনে রপ্তানি না বাড়ার মূল কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। সে কারণে চীনের রপ্তানিকারকরা এখন অভ্যন্তরীণ বাজারে তৈরি পোশাক বিক্রি করছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান টিবিএসকে বলেন, চীন তার নিজস্ব পোশাক রপ্তানি কমিয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়েছে, যে কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়েনি।
একই অবস্থা দেখা যায় চামড়া ও জুতা রপ্তানির ক্ষেত্রেও।
চীনের বাজারে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা থাকলেও গুণগত মানের অভাব ও বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যারের বাড়তি দামের কারণে রপ্তানি বাড়ছে না বলে গত ২৭ এপ্রিল পৃথক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বেইজিং এর বাংলাদেশ দূতাবাস।
গত এক দশকে গড়ে বাংলাদেশ থেকে চীনে ফুটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ ১৬.৭০ মিলিয়ন ডলার। শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা কার্যকর হওয়ার পর গত ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে ফুটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ প্রায় একই রয়েছে। এই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ১৩.১৯ মিলিয়ন ডলার। তারপরও একে বেশি বলা যায়। কারণ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি সর্বনিম্ন ২.২৪ মিলিয়নে নেমে আসে। গত অর্থবছরেও এই দুরাবস্থা অব্যাহত ছিল, এসময় রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১.৮০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
পাঁচ বছর আগে চীনে চামড়া পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর পর থেকেই রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে। গত অর্থবছর শতভাগ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও চামড়া রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮.২৯ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত এর পরিমাণ ৫৩.৬৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও চীনে লেদার ও লেদার গুডস রপ্তানির পর ১৫% ভ্যাট, প্রভিন্সিয়াল ট্যাক্সসহ মোট ২৭%-৩০% পর্যন্ত ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। "এ কারণে আমরা চীনে রপ্তানি বাড়াতে পারছি না। এসব বাধা দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি।"
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সেলরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন বিপুল পরিমাণ চামড়া আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া থেকে, কারণ এসব দেশে মেশিনের মাধ্যমে পশুর দেহ থেকে চামড়া ছাড়ানো হয় আর আকারেও বড় হয়। এ ধরণের চামড়া আমদানি লাভজনক বলে মনে করেন চীনা ক্রেতারা।"
খাদ্য রপ্তানি বৃদ্ধি ঘিরে অনর্থক আশা:
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জুলাই থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি আবার শুরু হয়।
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য এটি ছিল মাহেন্দ্রক্ষণ, কারণ এ দুটি পণ্য রপ্তানি করে বছরে তারা প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রায় ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে রপ্তানির মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধির আশাও দেখায়। তবে এই আশাবাদের ভিত্তি সঠিক ছিল না।
তার উপর আবার মান নিশ্চিতে ব্যর্থতার কারণে বিভিন্ন কৃষি পণ্য এবং হিমায়িত খাদ্য পণ্যের রপ্তানি স্থগিত রয়েছে।
দূতাবাস বলেছে, চীনের নির্ধারিত মান নিশ্চিত করতে না পারা এবং স্বাস্থ্যসনদ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০২০ এর জুন থেকে পরবর্তী এক বছর চীনের বাজারে বাংলাদেশের এডিবল এ্যাকোয়াটিক এ্যানিমেলস বা কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ ছিল। এতে বাংলাদেশের ৫০ মিলিয়ন ডলারেও বেশি রপ্তানি আয় বাধাগ্রস্ত হয়।
গত বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ৮টি প্রতিষ্ঠান সীমিতভাবে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি শুরু করেছে, আরও ৮টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের কারণে চীন খাদ্যপণ্য আমদানিতে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। বিশেষ করে, হিমায়িত খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
গত জানুয়ারি থেকে ১৮ প্রকার খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চীনা কাস্টমস এর রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ হতে এখন পর্যন্ত মাত্র দু'টি পণ্যের (তিল ও তিলের তেল) রপ্তানি হয়।
গত জুলাই মাসে দূতাবাস থেকে চীনের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের ৬টি কৃষি পণ্যের রপ্তানি সুবিধা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং আলুর পেস্ট। এসব পণ্যের ঝুঁকি পর্যালোচনার জন্য চীনা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব পণ্য অনুমোদন পেলে চীনে রপ্তানি কিছুটা বাড়ার আশা করছে দূতাবাস।
বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা টিবিএসকে বলেন, চীনের মতো বিশাল বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার পর তা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের যে ধরণের বিশাল উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা নেওয়া হয়নি। রপ্তানি বাড়াতে সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
চীনে বাগদা চিংড়ির রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মৃধা বিজনেস লিমিটেড এর এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনে রপ্তানি বৃদ্ধিতে সিঙ্গেল কান্ট্রি ফেয়ার আয়োজনসহ নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। "বছরজুড়ে চীনে বাংলাদেশের পণ্য প্রদর্শণীর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তা চেয়েছি। চীনে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।"
যেসব সুপারিশ করা হয়েছে:
চামড়াজাত পণ্যসহ বাংলাদেশের উন্নতমানের বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে চীনে ডিলার বা এজেন্ট নিয়োগ করা এবং আগ্রাসী বিপণন এর সুপারিশ করেছে বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস।
এতে বলা হয়েছে, চীনের স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত বিদেশি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। চীনে বাংলাদেশি ব্রান্ড অনুপস্থিত। চীনে তাদের কোনো এজেন্ট বা ডিলার নেই। এছাড়া, মানসম্পন্ন এবং উন্নত প্যাকেটজাত পণ্য ছাড়া সাধারণ মানের পণ্য দিয়ে চীনের বাজার কোনোভাবেই দখল করা সম্ভব নয়।
"চীনের সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশের ব্রান্ড ইমেজ এখনও তৈরি হয়নি। ব্রান্ড ইমেজ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের বড় ব্রান্ডগুলোকে চীনে তাদের আউটলেট এবং অফিস খুলে মার্কেটিং, প্রমোশন, বিজ্ঞাপন, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে অনলাইন এবং অনসাইট এগ্রেসিভ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্রান্ড ইমেজ তৈরি করতে হবে"- বলেছে দূতাবাসের রিপোর্ট।
এতে আরও বলা হয়েছে, চীনে বিশ্বমানের ব্রান্ডেড পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চীনে বাংলাদেশি ব্রান্ডগুলোর আউটলেট বা বিক্রয় নেই। তাই বাংলাদেশের উন্নতমানের চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার ব্রান্ডগুলো চীনে আউটলেট স্থাপন করে এজেন্টের মাধ্যমে মার্কেটিং, প্রমোশন, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানির সুযোগ আরও বাড়ানো যেতে পারে।
এছাড়া, চীনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে সুপারিশও করেছে দূতাবাস।