১৪ খাতের কর্মীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার কেনার সামর্থ্য নেই: সিপিডি
রাজধানী ঢাকায় চার সদস্যের পরিবারের এক মাসের নিত্য ব্যবহার্য ১৬ ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম আট হাজার টাকার বেশি। মজুরি আরও কম থাকায় এক জনের আয়ে ডাল-ভাতের ব্যয় মেটে না হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কসমেটিক, টেইলরিং, কটন টেক্সটাইল, বেকারি, কনফেকশনারি, অটোমাবাইল ওয়ার্কশপ, লেদার ফুটওয়্যার ইন্ডাট্রিসহ অন্তত ১৪ খাতের শ্রমিকদের।
প্রয়োজনমতো মাছ ও মাংসের দাম যোগ করলে ৪ সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য বাবদ ব্যয় দাড়ায় ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা, যার যোগান দেওয়া কোনো খাতের শ্রমিকের জন্যই সম্ভব নয়।
অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে সংস্থাটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রোববার বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজনের জীবনযাত্রা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাজারে কিছু পণ্যের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়লেও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হচ্ছে খুবই সামান্য। প্রকৃত তথ্য সামনে না আসায় সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, "ঢাকা মহানগরীতে এক কক্ষের এপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে সব ধরনের সেবার মূল্য ও খাদ্যপণ্যের দাম মেটাতে ২৯ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়। অথচ আয় কম থাকার কারণে মাসে আট হাজার টাকা ব্যয়ের সক্ষমতাও নেই অনেক খাতের শ্রমিকদের।"
মূল্যস্ফীতির চলমান ধারা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, "বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের খুব বেশি কিছু করার না থাকলেও শুল্কের হার কমিয়ে আনা, সিন্ডিকেট ও মজুদ কমিয়ে আনার মাধ্যমে সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমাতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, রেয়াতি মূল্যে খাদ্য ও পণ্য সরবরাহের পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে পারলে এর প্রভাবে বাজারে দাম কমে আসবে।
এছাড়া দরিদ্র শ্রেণির আয় বাড়লে মূল্যস্ফীতির চাপ তারা কিছুটা সামাল দিতে পারবে বলে মন্তব্য করে তিনি সব খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "বর্তমান চালের বাজরে যে সরবরাহ বাজারে তাতে আমার মনে হয় চালের এতো উচ্চমূল্য হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিগত অর্থবছরের চেয়ে এ বছর চালের আমদানি ৬০ হাজার টন বেশি হয়েছে। মজুদ ১২ লক্ষ মেট্রিক টন সেটিও যথেষ্ট মাত্রায় ভালো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার অব্যবস্থাপনা চিত্র ফুটে ওঠেছে।"
চাল ছাড়াও ভোজ্যতেল, ডলার, জ্বালানীর বাজারে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এর উৎস কিছু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে মূল্যস্ফীতির চাপ, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবে ঘাটতি, বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ। এর ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং তা অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি।
এ সময় তিনি বলেন, "অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও বছর শেষে লক্ষ্যের চাইতে আদায় অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা কম হবে। আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যয় না বাড়ায় বড় ঘাটতির লক্ষ্যের বিপরীতে এখন পর্যন্ত বড় সারপ্লাস রয়েছে।"
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইসিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা কমে আসছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি সামর্থ থাকলেও মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না, যোগ করেন ড. ফাহমিদা খাতুন।
বেশ কিছু খাতে সরকারের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আগামীতে আরও বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হওয়ায় চাপ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।