উত্তরাঞ্চলের বন্যার প্রভাব ঢাকার পণ্য বাজারে
সিলেটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার প্রভাবে ঢাকায় পেঁয়াজ,চিড়া,মুড়ি,শাক-সবজি ইত্যাদি নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ শতাংশ বেড়েছে, বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল,পল্টন, মগবাজার,মধুবাগে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের শাক-সবজিতে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ করে দাম বেড়েছে।
গাজর, টমেটো ও শসাতে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা করে বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা নাসির খান টিবিএসকে বলেন,বন্যার কারণে রাজধানীতে বিভিন্ন জেলা থেকে আগের তুলনায় সবজি কম আসছে। এ কারণে শাক-সবজির দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে বন্যায় সব ধরনের শাক-সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। যে কারণে রাজধানীর বাজারে শাক-সবজি ও মাছের সরবরাহ কিছুটা কমেছে।
প্রতি কেজি শসা ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৯ এবং টমেটো ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৫০ টাকা ছিল। চিচিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, পটোল ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের পিস ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, চালকুমড়ার পিস ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি চাকুরিজীবি কামাল উদ্দিন হাতিরপুলে বাজার করতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আর কত ব্যয় সংকোচন করে সংসার চালাবো! সব জিনিসের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে হু হু করে বাড়ছে। ২৫ হাজার টাকা বেতন পাই, বেতন তো এক টাকাও বাড়ে নাই, সামনের দিনে সংসার চালানোই মহা দায়।
এদিকে পেঁয়াজের দামও প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা বাজারে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
চিড়া-মুড়ি-গুড়ের দামও বেড়েছে
সিলেটসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে বাজারে দাম বেড়ছে চিড়া,মুড়ি,গুড় এসব শুকনা খাবারের। বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য অনেক ব্যক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক দল এসব শুকনো খাবার কিনছে।
আর এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ কেজির ২৪০০ টাকার চিড়ার বস্তা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৭০০ টাকা হয়ে গেছে, ২৯০০ টাকার মুড়ির বস্তা ৩২০০ টাকা হয়ে গেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সাদা ও লাল চিড়া ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর খুচরা বাজারে ৮০ টাকা।
৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খোলা মুড়িও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিড়ার দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি আখের পাটালি গুড়ের দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। খুচরা বাজারে সেটা এখন সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের চিড়া,মুড়ি ও গুড় ব্যবসায়ী হাছান দুলাল বলেন, 'বন্যার কারণে বাজারে শুকনা খাবারের সরবরাহ কম। উল্টো বন্যার কারণে শুকনা খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এ সুযোগে মিলমালিকেরা চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম বাড়িয়েছেন।
এদিকে কোরবানির ঈদের আর মাত্র ১৫ দিন বাকি থাকলেও মুদ্রাস্ফীতি ও বন্যার প্রভাবে মশলার দোকানে তেমন বিক্রি নেই।
করওয়ান বাজারের পাইকারি মশলা ব্যবসায়ী ইয়াছিল আলম বলেন, গত বছর এ রকম সময় আমি দিনে অন্তত ৩-৪ লাখ টাকার মশলা বিক্রি করতাম, এ বছর দিনে এর ৫০ শতাংশও বিক্রি হচ্ছে।
"আজকে শুক্রবার ছুটির দিনেও তেমন ক্রেতা নাই। এমনিতেই মানুষের হাতে টাকা নাই, তার উপর চলছে বন্যা, তাই মানুষ কিনতে পারছে না।"
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে বাজারে সাপ্লাই চেইন আরও উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সরকারি পর্যায়ে ট্যাক্স সমন্বয় বা আমদানির মাধ্যমে সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।