আফগান যুদ্ধের অবসান, যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি
দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা আফগান যুদ্ধের ইতি টানতে ঐতিহাসিক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান।
শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তালেবান ও মার্কিন শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, তালেবান শর্ত মেনে চললে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা।
আর এখন থেকে আফগানিস্তানে আর কোনো হামলা চালাবে না তালেবান। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদাকে কোনো তৎপরতা চালাতে না দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছে তারা।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদারের নেতত্বে গোষ্ঠীটির ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। তবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ ও মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যেকোনো ধরনের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছে তালেবান।
গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, শান্তি চুক্তি এবং সমঝোতার সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ-ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলায় আল-কায়েদাকে দায়ী করে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' ঘোষণা করে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
গত ১৮ বছর ধরে চলমান উভয় পক্ষের এই সংঘর্ষে ৩২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে ২৪০০-র বেশি মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।
এখনো দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে চলমান সংঘর্ষের অবসানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০১১ সাল থেকে আফগানিস্তানে শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে আসা তালেবান নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে কাতার। ২০১৩ সালে তালেবানের একটি কার্যালয় চালু করা হয়, তবে পতাকা নিয়ে বিরোধে সেই বছরই সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়।
২০১৮ সালে বাহিনীটি ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসবে যাতে শান্তির একটি রোডম্যাপ তৈরি করা যায়। কিন্তু চরমপন্থি এই বাহিনীটি আফগান সরকারের সঙ্গে কোন আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে তাদের 'আমেরিকান পুতুল' হিসেবে অভিহিত করে।