এই রমজানে সৌদিতে ওমরা পালনের নিয়ম-কানুন
পবিত্র রমজানে ওমরা এবং প্রার্থনার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়। টিকাগ্রহণ করাকে সেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকার অন্তত এক ডোজ না নেওয়া কাউকে মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনায় মসজিদুল নববীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
সৌদির ইসলামি বিষয়, দাওয়াহ ও নির্দেশনা সম্পর্কিত মন্ত্রণালয় তাদের ঘোষণায়- ওমরা যাত্রীসহ পবিত্র দুই মসজিদে আগমনকারী সকল মুসল্লির স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার লক্ষ্যে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।
ইতোপূর্বে, গেল বছরের অক্টোবরে সাত মাস পর আলোচিত দুই মসজিদে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। তারপর লাখ লাখ মানুষ মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ ও ওমরা পালন করেছেন।
এই রমজানের প্রথম ১০ দিনেই অন্তত ১৫ লাখ মুসল্লি মসজিদুল হারামে প্রার্থনা করেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম আরব নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে, সৌদি হজ এবং ওমরা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. আমর আল-মাদ্দাহ এবারের রমজানে যারা সৌদিতে ওমরা পালনে ইচ্ছুক তাদের জেনে রাখা উচিৎ এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
আরব নিউজ: মহামারির সতর্কতা মূলক ব্যবস্থার অনুসারে মক্কায় মসজিদুল হারামের পরিচালনা সক্ষমতা কত?
ড. আমর আল-মাদ্দাহ: এখন প্রতিদিন ৫০ হাজার ওমরা পালনকারীসহ এক লাখ মুসল্লিকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: রমজানে কি সৌদির বাইরে থেকে আগমনকারীদের ওমরা পালনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে?
উত্তর: অবশ্যই দেওয়া হচ্ছে, এবার বেশ কয়েকটি দেশের পূণার্থীরা ওমরা পালনের সুযোগ পাবেন।
প্রশ্ন: স্থানীয় ও বিদেশি ওমরা পালনে ইচ্ছুকদের ক্ষেত্রে কি একই রকমের স্বাস্থ্যবিধি প্রযোজ্য হবে?
উত্তর: গেল বছরের ২০ আগস্ট জারি করা এক রাজকীয় ফরমানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মসজিদুল হারামে প্রবেশে ইচ্ছুক সকলকেই বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড টিকা নিতে হবে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা সকল মুসল্লি ও ওমরা যাত্রীকে এজন্য তাদের টিকাগ্রহণের সনদ প্রদর্শন করেই অনুমতি নিতে হবে।
প্রশ্ন: সৌদিতে অনুমোদিত টিকার বাইরে অন্যান্য দেশে দেওয়া ভ্যাকসিন যেমন; ফাইজার-বায়োএনটেক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাগ্রহণকারীদের কি উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হবে?
উত্তর: সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত টিকা এবং তাদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিক-নির্দেশনা অনুসারে হজের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও টিকা অনুমোদনের তথ্যাবলী নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো টিকার গুণাগুণ বিশ্লেষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনাকে আমলে নেয়। বাজারে আসা নতুন ভ্যাকসিনের ঝুঁকি ও কার্যকারিতা নিরূপণেই এমন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। মুল্যায়নের পরই সেগুলো গ্রহণকারীদের ব্যাপারে হজ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া ভ্যাকসিন তথ্য ও পর্যালোচনার ওপর নির্ভরশীল। একেকটি দেশের স্বাস্থ্য (টিকা) সনদ ওই দেশের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা অনুসারে দেওয়া হলেও, সৌদি হজ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওমরার অনুমতি দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন: বিশ্বের নানা দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ছে, এসব দেশ থেকে আগত পূণ্যার্থীদের ব্যাপারে হজ মন্ত্রণালয় কি ব্যবস্থা নিচ্ছে?
উত্তর: করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকা বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদিতে ফ্লাইট আগমনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব দেশের কাউকে ওমরাসহ অন্য কোনো কারণেই আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
টিকা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সাহায্য করে, তাই টিকাদানের গতি সন্তোষজনক এমন কিছু দেশে সংক্রমণ বাড়লেও ফ্লাইট আগমন বন্ধ করা হয়নি। এজন্যেই কেউ টিকাগ্রহণ করেছেন কিনা- তা যাচাই করে তারপর ওমরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তার মাধ্যমে ভাইরাস বিস্তারের ঝুঁকি অনেকাংশে কম থাকে।
প্রশ্ন: সৌদিতে আসার পর ওমরা শেষ হওয়া পর্যন্ত একজন পূণ্যার্থীকে কীভাবে পরিচালিত করা হয়?
উত্তর: একটা কথা জেনে রাখা দরকার, মসজিদুল হারামের নিরাপদ পরিচালনা সক্ষমতা সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসারে নির্ধারিত হয়। সেভাবেই একজন ওমরা যাত্রীর অবস্থান ইতমার্না এবং তাওয়াক্কালনা নামক দুটি অ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়। জায়গা বরাদ্দ নিশ্চিত হলে অভ্যর্থনা কেন্দ্রে দরকারি সনদ দেখানোর পর তাকে মসজিদে নামাজ আদায় বা ওমরা পালনের জন্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
অভ্যর্থনা কেন্দ্রে প্রথমে অনুমতিপত্রের মেয়াদ পরীক্ষা করা হয়, তারপর দেখা হয় টিকাগ্রহণের তথ্য নির্ভুল কিনা। এছাড়া, মক্কায় আসার আগে ওমরা যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট পরিবহন কোম্পানিকে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এসব সংস্থা বিশেষভাবে জীবাণুমুক্ত করা বাহনে যাত্রীদের আনা-নেওয়ার কাজে যুক্ত আছে। বাসে ওঠার পর যাত্রীদের মসজিদুল হারামের নির্ধারিত বাস স্টপেজগুলোয় পৌঁছে দেওয়া হয়।
- সূত্র: আরব নিউজ