এক বছরে ১০০ দেশকে ৫০ কোটি ডোজ ফাইজার ভ্যাকসিন দেবে বাইডেন প্রশাসন
বৈশ্বিক ভ্যাকসিন স্বল্পতা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে চাপের মুখে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী এক বছরের মধ্যে ১০০ দেশকে ৫০ কোটি ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন অনুদান দেবেন। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন এই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আট দিনব্যাপী ইউরোপ সফরের মধ্যে দিয়েই এই চুক্তিতে পৌঁছেছে হোয়াইট হাউস। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব নেতৃত্ব হিসেবে আমেরিকার অবস্থান জোরদার করা এবং ট্রাম্পের সময়কালীন যেসব সম্পর্কে চিড় ধরেছিল, তা ঠিক করার জন্য এই ইউরোপ সফর একটি সুবর্ণ সুযোগ।
ইংল্যান্ডের সাফোকের আর.এ.এফ. মাইল্ডেনহলে পৌঁছে আমেরিকান সেনাদের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, 'আমাদেরকে এই কোভিড-১৯-এর অবসান ঘটাতে হবে; শুধুমাত্র নিজ দেশেই নয়, সব জায়গায়। আমাদের সামনে এমন কোনো দেয়াল নেই যা আমাদের এই মহামারি কিংবা আগামী কোনো জীবতাত্ত্বিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। সামনে অন্যান্য বিপদও আসতে পারে। তাই এগুলো থেকে বাঁচতে হলে সমন্বিত পদক্ষেপ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।'
ফাইজার চুক্তির সঙ্গে জড়িত কারও কারও মতে, আমেরিকা এসব ভ্যাকসিন ডোজের দাম পরিশোধ করবে অলাভজনক উপায়ে। প্রথম ২০ কোটি ডোজ বিতরণ করা হবে এ বছরের মধ্যেই এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে দেওয়া হবে বাকি ৩০ কোটি। ভ্যাকসিন বণ্টনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই ডোজগুলো দেওয়া হবে।
ন্যাটো ও জি-৭ সামিটে যোগদান এবং জেনেভায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভি. পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহের জন্য ইউরোপ সফর শুরু করেছেন বাইডেন। এই সফরে অন্য দেশগুলোকেও তিনি ভ্যাকসিন সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের 'বৈশ্বিক টিকাদান পরিকল্পনা' বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেফ্রি ডি. জিয়েন্ট বলেন, 'বাইডেন বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাবেন, যেখানে আমেরিকার নেতৃত্বে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভ্যাকসিনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।'
এই মুহূর্তে হোয়াইট হাউস মহামারি মোকাবিলায় আমেরিকার সাফল্য, বিশেষত তাদের টিকাদান প্রচারণাকে স্পটলাইটে আনার চেষ্টা করছে। বাইডেন এটিকে কূটনৈতিক চাল হিসেবেও ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন এবং চীন ও রাশিয়াও একই পথই অনুসরণ করছে। তবে এক্ষেত্রে বাইডেন যে কৌশল অবলম্বনের জেদ ধরেছেন, তা হলো, চীন কিংবা রাশিয়ার মতো আমেরিকা তাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন গ্রহণ করা দেশগুলোর কাছ থেকে বিনিময়ে কোনো সুবিধা নেওয়ার চুক্তি করবে না।
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিশ্বে এখনো ১১ বিলিয়ন ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন ডোজ দরকার। আমেরিকা ৫০ কোটি ডোজ দিলেও ভ্যাকসিন স্বল্পতা থেকেই যাবে। তবু আমেরিকা যে পরিমাণ ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল, ৫০ কোটি ডোজ নিঃসন্দেহে তার চেয়ে বেশি প্রাপ্তি।
এদিকে, কিছু দেশ আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, তাদের বিপুল ভ্যাকসিন সরবরাহ থেকে যেন অন্যদের সাহায্য করা হয়। আফ্রিকান দেশগুলোতে ১ শতাংশেরও কম মানুষ পূর্ণাঙ্গ টিকা নিয়েছেন। অথচ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যাটা ৪২ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য উপদেষ্টারা বাইডেনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও তারা মনে করছেন, স্রেফ ভ্যাকসিন দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব শেষ করা উচিত নয়। তাদের এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত যেন দেশগুলো নিজেরাই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে। কারণ অপর্যাপ্ত সরবরাহ থেকে কেনার চেয়ে বিশ্বের এখন নতুন নতুন পর্যায়ে ভ্যাকসিন উৎপাদন করা জরুরি।
বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যেই আমেরিকায় বিতরণের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের ৩০ কোটি ডোজ কেনার চুক্তি করেছিল। নতুন এই ৫০ কোটি ডোজ সেই চুক্তিরই একটি নবায়নকৃত অংশ। তবে এসব ভ্যাকসিনের ঠিক কী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে ফাইজার কিংবা বাইডেন কর্তৃপক্ষের কেউই মুখ খোলেনি।
-
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস