করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে ইরানে মসজিদ, স্কুল বন্ধ
বিশ্ব যখন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে, ঠিক তখনই তৃতীয় বারের মতো সংক্রমণের জোয়ার আঘাত হেনেছে ইরানে। উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশটির মোট ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ২৫টি'তে মসজিদ, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাফে, ব্যয়ামাগার, জাদুঘর ও প্রেক্ষাগ্রহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানী তেহরানে রূপচর্চা সেলুন, জনপ্রিয় চা পানশালা, প্রেক্ষাগৃহ, পাঠাগার এবং ফিটনেস ক্লাবগুলোর উপর বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে আরও এক সপ্তাহ।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি অর্থনীতি তীব্র চাপের মুখে। জরুরি ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পেতেও সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তেহরান। এ অবস্থায় সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান রক্ষা করার লক্ষ্যে।
তবে পুলিশ খোলা থাকা সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মনিটর করবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না, এমন প্রমাণ পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশপাশি তেহরানে বিয়ে, জানাযায় জমায়েত এবং সকল ধরনের সম্মেলন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে নতুন করে সংক্রমণ জোয়ারের জন্য প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাকেই দায়ী করেছেন। এখন থেকে নিয়ম-কানুন মেনে চলা নিশ্চিত করতে একটি আলাদা পরিচালনা কেন্দ্র চালুর ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। খবর আরব নিউজের।
অবশ্য, মহামারি হুমকি প্রথমদিকে অবহেলা করার অভিযোগ রয়েছে দেশটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রাচ্যে করোনায় সবচেয়ে প্রভাবিত এবং প্রথম দেশ ইরান। গত ফেব্রুয়ারিতেই সেখানে হানা দেয় প্রাণঘাতী জীবাণুটি। ওই সময় থেকেই দৈনিক সংক্রমণ হার এবং মৃত্যু সংখ্যায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক রেকর্ড হয় দেশটিতে। গত সেপ্টেম্বর থেকে জীবাণু বিস্তার আর মৃত্যু আবারো বাড়ছে।
এ অবস্থায় আজ রোববার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সীমা সাদাত লারি জানান,গত শনিবার সারাদিনে মোট ৭,৭১৯টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৬,২০,৪৯১ জনে।
একইদিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৩৪ জনের। ফলে মোট প্রাণহানি হয়েছে ৩৫ হাজার ২৯৮ জনের, ওই মুখপাত্র জানান।
তবে আনুষ্ঠানিক সংখ্যার চাইতে প্রকৃত সংক্রমণ এবং প্রাণহানি অনেক বেশি বলেই ধারণা সিংহভাগ পর্যবেক্ষকদের। দেশটির একটি দৈনিক ইতেমাদ ডেইলি লিখেছে, ''সরকার যা প্রকাশ করছে তার চাইতেও অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। বিশেষ করে, রাজধানী তেহরানে এই সংখ্যা অনেক কম দেখানো হচ্ছে।''
দেশটির অনেক মানুষ এখন সম্পূর্ণ লকডাউন চালুর আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু, অর্থনীতির নাজেহাল অবস্থায় এমন পদক্ষেপ নিলে হিতে-বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকে লকডাউন চালু করা হলে, ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠী পতন হওয়ার ঝুঁকি দেখছে সরকার।
অচিরেই কঠিন সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা ৯শ' জনে দাঁড়াবে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির একজন শীর্ষ চিকিৎসক।
ইরানের প্রধান বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রধান আলিরেজা নাজি বলেন, ' যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে সমগ্র দেশকে দুই-তিন সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। বড় শহরগুলোতে এর কোনো বিকল্প নেই।'