কোভিডের চেয়ে শিশু-কিশোরদের ফাইজার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি
ফাইজার/বায়োএনটেক কোভিড ভ্যাকসিনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে সুস্থ ছেলে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা বেশি হতে পারে যা কোভিডের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। মার্কিন গবেষকরা দাবি করেছেন, এসকল ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
মেডিকেল ডেটা নিয়ে তাদের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী সুস্থ ছেলেদের করোনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেয়ে ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত মায়োকার্ডাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা চার থেকে ছয় গুণ বেশি।
ফাইজার/বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের কয়েকদিনের মধ্যেই বিরল কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় শিশুদের মধ্যে। এছাড়া, মডার্নার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও একই রকমের লক্ষণ দেখা যায়। গবেষকরা বলছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত কারণে ছেলে শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ শিশুর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক ইমিউনোলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের অধ্যাপক সল ফস্ট বলেন, যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন এবং ইমিউনাইজেশন যৌথ কমিটি (জেসিভিআই) শিশু-কিশোরদের ভ্যাকসিন বিষয়ে নেওয়া সতর্কতামূলক পদ্ধতিকে সমর্থন করে নতুন এ গবেষণা। তবে, তিনি এ গবেষণাকাজে জড়িত ছিলেন না।
জেসিভিআই ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী সুস্থ শিশু-কিশোরদের টিকা না দেওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধান মেডিকেল অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে, এবং তারা আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা বিশেষত করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে বা, যারা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ব্যক্তির সাথে বসবাস করে তারাই মূলত ভ্যাকসিনের জন্য যোগ্য।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. ট্রেসি হোগ এবং তার সহকর্মীরা এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী মার্কিন শিশুদের দেহে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন। ফাইজার/বায়োটেক ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পন্ন করা ছেলেশিশুদের মধ্যে মায়োকার্ডাইটিসের হার অনুমান করেন তারা।
তাদের গবেষণায় দেখা যায়, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী সুস্থ ছেলেদের জন্য প্রতি মিলিয়নে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬২.২, এবং ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী সুস্থ ছেলেদের জন্য প্রতি মিলিয়নে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪।
অপরদিকে, মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রতি মিলিয়নে এ হার যথাক্রমে ১৩.৪ এবং ১৩। তারা জানায়, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের যে হার রয়েছে তাতে সুস্থ কিশোরদের আগামী ১২০ দিনের মধ্যে কোভিডে সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি প্রতি মিলিয়নে প্রায় ৪৪ জন। তবে তাদের গবেষণাটির পিয়ার রিভিউ সম্পন্ন হয়নি।
তাদের এ গবেষণা কতটা নির্ভরযোগ্য এবং ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী সুস্থ শিশু-কিশোরদের টিকা দেওয়া হলে যুক্তরাজ্যে তাদের উল্লেখিত কেসগুলো দেখা যাবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া ভিন্নভাবে রেকর্ড করা হয় এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে শট দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রকের মতে, ফাইজার/বায়োটেকের টিকা দেওয়ার পর মায়োকার্ডাইটিসের হার প্রতি মিলিয়ন ডোজে মাত্র ছয়।
এখন পর্যন্ত, যুক্তরাজ্যে কোভিডের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা বেশ কম এবং দীর্ঘ কোভিডের বড় ঝুঁকিতে তারা না-ও থাকতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোভিড ধরা পড়া শিশুদের মধ্যে ১৪ শতাংশ শিশু সংক্রমণের ১৫ সপ্তাহ পরেও লক্ষণ দেখাতে পারে, কিন্তু যেসব শিশুরা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি তাদের এবং আক্রান্তদের ক্লান্তির মাত্রা একই রকমের। এ থেকে ধারণা করা যায়, কোভিডের ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যেসকল সমস্যা দেখা যায় তা হয়তো শিশুদের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না।
মূলত, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের পরেই মায়োকার্ডাইটিসের কেস ধরা পড়ে। তাই শিশুদেরকে একটি ডোজ দিয়ে তাদেরকে এ রোগ থেকে রক্ষা করা যেতে পারে এবং কোভিডে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
"যদিও টিকা দেওয়ার পর মায়োকার্ডাইটিস খুবই বিরল, আমরা প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ পরিবর্তন করতে পারি বা ঝুঁকি এড়াতে ভ্যাকসিনগুলোকে ভিন্নভাবে একটির সাথে আরেকটি মিলিয়ে দেখতে পারি," বলেন প্রফেসর ফস্ট।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেসিভিআই- এর সদস্য অধ্যাপক অ্যাডাম ফিন বলেন, "আমি জেসিভিআই- এর পরামর্শের পক্ষে আছি। এসময় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী সুস্থ শিশুদের রিস্ক-বেনিফিটের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া উচিত নয়।"
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান