চীনের হাইপারসনিক মিসাইল পরীক্ষা ‘স্পুটনিক মুহূর্তে’র কাছাকাছি: মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা
শীর্ষ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা চীনের সাম্প্রতিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে 'স্পুটনিক মুহূর্তের' প্রায় কাছাকাছি বলে আখ্যা দিয়েছেন। পেন্টাগন চীনের এই কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অভ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে বলেন, 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাইপারসনিক অস্ত্র ব্যবস্থা পরীক্ষার ঘটনা দেখলাম আমরা। ঘটনাটি ভীষণ উদ্বেগজনক। একে সম্পূর্ণরূপে স্পুটনিক মুহূর্ত বলা যায় কি না জানি না, তবে তার খুব কাছাকাছিই হবে। ব্যাপারটার ওপর আমাদের নজর আছে।'
'স্পুটনিক মুহূর্ত' বলতে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক উৎক্ষেপণের ঘটনার কথা বোঝানো হয়। প্রযুক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবত মার্কিনরা। তাদের সেই ধারণা ভীষণ নাড়া খেয়েছিল স্পুটনিক উৎক্ষেপণের ঘটনায়।
চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তার এভাবে প্রকাশ্যে কথা বলাটা অত্যন্ত দুর্লভ ঘটনা।
এ মাসের শুরুর দিকে চীনের এই পরীক্ষার খবরটি প্রথম প্রকাশ করে ফাইন্যানশিয়াল টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে বেইজিং। লক্ষ্যবস্তুর দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে ক্ষেপণাস্ত্রটি পৃথিবীর কক্ষপথের নিচের দিক দিয়ে পরিভ্রমণ করছিল।
তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি শেষ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। লক্ষ্যবস্তু থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে গিয়ে পড়ে সেটি। ক্ষেপণাস্ত্রটি চীন মহাকাশে পাঠিয়েছিল লংমার্চ রকেটে করে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য এই মিসাইল তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং। কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, আমেরিকার বন্দর কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন স্থাপনাগুলোতে অপারমাণবিক হামলা চালানোর জন্য নতুন এই মিসাইল তৈরি করা হতে পারে।
চীনের কাছে বর্তমানে ৩৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। মার্কিন কর্মকর্তারা অনুমান করছেন, আগামী দশকে বেইজিং তাদের অস্ত্রের মজুদ অন্তত দ্বিগুণ করতে পারে।
সাধারণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। তবে এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এবং শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে।
চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের খবরটি এমন এক সময় প্রকাশিত হলো, যখন তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চরম উত্তেজনা চলছে।