টিকা প্রাপ্তিতে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অগ্রাধিকারের প্রতিশ্রুতি পেল শ্রীলংকা
ভারতে উৎপাদিত টিকা রপ্তানি শুরু হওয়া মাত্র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার চালান পাবে শ্রীলংকা। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সুভ্রামনিয়াম শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে এব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।
গত বুধবার (৬ জানুয়ারি) এব্যাপারে জানায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। সেখানে বলা হয়, সুভ্রামনিয়ামের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেওয়ার সময় রাজাপক্ষ তাকে ভারতে তৈরি টিকা রপ্তানির অনুরোধ করেন। আর তাতে সাড়া দিয়েই ভারতীয় মন্ত্রী এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জয়শঙ্কর বলেন, "ভারত এখন কোভিড পরবর্তী সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে চায়। এজন্য আমি ভারত থেকে টিকা পেতে শ্রীলংকার আগ্রহ নিজ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরব।"
ওই বৈঠকে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীনেশ গুণবর্ধনে-ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, "ভারতের 'প্রতিবেশী প্রথম' একটি ইতিবাচক নীতি। ইতোমধ্যেই, এটি আমাদের জনস্বাস্থ্য খাত এবং সার্বিক অর্থনীতিতে নজিরবিহীন এ দুঃসময়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।"
জয়শঙ্কর বর্তমানে দুইদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শ্রীলঙ্কা আছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) তার সফরের শেষদিন। টিকা অনুমোদন পরবর্তীকালে এই প্রথম ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ টিকা রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো।
ইতোপূর্বে, পুনে ভিত্তিক সেরাম ইনস্টিটিউডের মুখ্য নির্বাহী আদর পুনেওয়াল্লা জানান, টিকা রপ্তানিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগে ভারতের চাহিদা পূরণ করে তারপর রপ্তানির কথা ভাবা হবে। এনিয়ে বাংলাদেশেও তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ, সেরামের সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত প্রতিষেধক আমদানির চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সরকারি পর্যায়েও জাতিসংঘের কোভাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে টিকাটি প্রাপ্তির আশা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় নয়াদিল্লির এক কূটনৈতিক সূত্র বার্তা সংস্থা ইউএনবি'কে জানায়, "সেরাম ইনস্টিটিউড প্রধানের দেওয়া বিবৃতি আমরা দেখেছি। প্রতিবেশী বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, কারণ ভারত তার প্রতিবেশীদের সবসময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে, এবারও ভিন্ন কিছু হবে না।"
কিন্তু, এসময় দেশটির শীর্ষ পর্যায় থেকে সেব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়নি। অথচ গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
ভারতের ওষুধ প্রশাসন দুটি টিকাকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে উদ্ভাবিত। অন্যটির উদ্ভাবক ভারত বায়োটেক নামের স্থানীয় একটি কোম্পানি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউডের সঙ্গে তাদের আবিষ্কৃত টিকা গণ-উৎপাদনের চুক্তি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। সেরামকে তারা শত কোটি ডোজ উৎপাদনের প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে, যা ভারতসহ উন্নয়নশীল ও স্বল্প আয়ের দেশে রপ্তানি করা হবে।
তবে ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশে টিকা রপ্তানিতে কয়েক মাস লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
- সূত্র: আল জাজিরা