ডেল্টার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা ওমিক্রন ঠেকাতেও কাজ করবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
মহামারি মোকাবেলায় করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন ঠেকাতে যেই ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ভিত্তি হিসেবে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কর্মকর্তারা। কিছু দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ভাইরাসের বিস্তারে ধীরতা আনতে পারে স্বীকার করে শুক্রবার এ কথা বলেন তারা।
বৃহস্পতিবার ভারতসহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৬টি দেশে ওমিক্রন সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, এখনও পর্যন্ত সেই দেশগুলোর তালিকা ছোট। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, নতুন রূপটি শীঘ্রই প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে।
ওমিক্রন সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অস্পষ্ট। ডেল্টা বা করোনার অন্যান্য ধরনের চেয়েও এটি বেশি সংক্রামক কিনা, যেমনটি সন্দেহ করছে বেশ কিছু স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ; এটি মানুষকে আরও গুরুতরভাবে অসুস্থ করে করে দিতে সক্ষম কিনা কিংবা বর্তমান টিকাগুলো ধরনটির বিরুদ্ধে কতখানি কার্যকর, এসব ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
ডব্লিউএইচও'র পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. তাকেশি কাসাই বলেন, "সীমানা নিয়ন্ত্রণ দেশে ভাইরাসের প্রবেশে কিছুটা বিলম্ব ঘটাতে পারে। তবে, প্রতিটি দেশ ও সম্প্রদায়কে ভাইরাসটির নতুন উত্থানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এসবের মধ্যে ইতিবাচক খবর হল, ওমিক্রন সম্পর্কে আমাদের কাছে বর্তমানে যে তথ্য রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বর্তমান দিকনির্দেশ পরিবর্তনের আপাতত প্রয়োজন নেই।" শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ফিলিপাইন থেকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এর অর্থ হল, টিকা দেওয়ার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি, সামাজিক-দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, ও অন্যান্য নির্দেশনাগুলোই মেনে চলতে হবে বলে জানান ডব্লিউএইচও'র রিজিওনার ইমার্জেন্সি ডিরেক্টর ড. বাবাতুন্ডে ওলোওকুরে।
সেইসঙ্গে যথাযথ সময়ে রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, "এছাড়া, প্রয়োজন অনুসারে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।"
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উভয়ই কম বলে জানা গেলেও ড. কাসাই সতর্ক করেছেন, এ অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে; পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে শীঘ্রই। তাই দেশগুলোকে অবশ্যই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে; এবং আশেপাশের আরও অনেক দেশেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
নতুন সংকটের মুখে আবারও বিশ্বজুড়ে লকডাইউন অর্থনীতিকে স্থবির করে তুলতে পারে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে ইতোমধ্যেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ড. কাসাই বলেন, "এটি স্পষ্ট যে মহামারিটি এখনও শেষ হয়নি এবং আমি জানি সবাই ওমিক্রন সম্পর্কে চিন্তিত। কিন্তু আজ আমি যে বার্তাটি দিতে চাই তা হল, করোনার ভবিষ্যত সংকট মোকাবেলা এবং এর স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো কমাতে আমাদের অবশ্যই দিক নির্দেশেনাগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।"
সূত্র: ইউএনবি/ এপি